বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার যন্ত্র খলসানি বা চাঁই তৈরী করে শত বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে জয়পুরহাটের বেরইল গ্রামের প্রায় ৬শ’ পরিবার। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বছরের ৬ মাস তাদের ব্যবসা ভাল চললেও বাকী ছয় মাস অভাব-অনটনে কাটে তাদের সময়। তারপরও বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকরে ধরে আছেন ওই গ্রামের মানুষ।
বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই জেলার বেরইল গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাঁশের তৈরী মাছ ধরার বিশেষ এক ধরনের ফাঁদ খলসানি বানানোর কাজে। স্থানীয়ভাবে এর নাম খলসানি হলেও কোথাও কোথাও চাঁই বা ঢেউল নামেও পরিচিত এই যন্ত্রটি। জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত খলসানি বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আনন্দে দিন কাটে তাদের। বছরের বাকি ৬ মাস অন্য কাজ করে কোন মতে সংসার চালাতে হয় বলে জানালেন বেরইল গ্রামের খলসানি তৈরী কারক ও বিক্রেতা সুকুমার চন্দ্র।
একসময় জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘী ও ধানক্ষেত পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বাশের তৈরী মাছ ধরার এই বিশেষ ধরনের যন্ত্র খলসানির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন আর সে অবস্থায় নেই। সে স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কারেন্ট জাল। ফলে হাট-বাজারে খলসানির আমদানির তুলনায় বেঁচা-বিক্রি কম বলে জানালেন খলসানি বিক্রেতা মোকলেছার রহমান। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখানকার তৈরী খলসানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
খলসানি তৈরীর কারিগরদের তালিকা তৈরী করে ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখবেন বলে জানান, বিসিক জয়পুরহাটের উপ-ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক।
সরকারী-বেসরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে একদিকে যেমন রক্ষা পাবে এই নান্দনিকতা পূর্ণ হস্তশিল্পটি অন্যদিকে খলসানী তৈরীর কারিগররা খুজে পাবে স্বাবলম্বী হবার পথ, এমন প্রত্যাশা করছেন বেরইল গ্রামের এই দরিদ্র পরিবার গুলো।