প্রাথমিকভাবে আউটগোয়িং কল বন্ধ হবে। আউটগোয়িং কল বন্ধের পরও সিম পুনঃনিবন্ধন না করলে এক পর্যায়ে ইনকামিং কলও বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে সংযোগ মূল দিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে অনিবন্ধিত সিম পুনঃনিবন্ধন অব্যাহত থাকবে। সিম পুনঃনিবন্ধন করার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হওয়া সংযোগ আবার চালু করা হবে। এজন্য গ্রাহককে সিমের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। সিমের মূল্য নির্ধারণ করে গ্রাহকদের তা জানিয়ে দেয়া হবে। একই সঙ্গে অপারেটরকেও নতুন নিবন্ধিত সংযোগের জন্য ১০০ টাকা হারে সিম ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সংযোগ পুনঃনিবন্ধনের শেষদিন পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি ৭০ লাখ কাস্টমার তাদের সংযোগ নিবন্ধন করেছেন। বিটিআরসির হিসাবে, এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ১৯ লাখ। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিটিআরসির কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে অন্তত ৩ কোটি মোবাইল ফোনের গ্রাহক হয়রানির শিকার হবেন। তবে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারী বলেন, অনিবন্ধিত সংযোগ ১৮ মাস পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। এরপর অপারেটররা চাইলে সেসব সংযোগ বিক্রি করে দিতে পারবেন। আনরেজিস্টার্ড সিম ক্রয় করার জন্য সিমের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তবে ৩১ মে’র পর অনিবন্ধিত সিম নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৪৫০ দিনের মধ্যে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করে সংযোগ পুনরায় চালু করতে পারবেন গ্রাহকরা। বিটিআরসির সচিব সারওয়ার আলম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী কোনোরকমের অর্থ ব্যয় ছাড়াই ৩১ মে মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে মোবাইল ফোন রি-রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া। এরপর আনরেজিস্টার্ড মোবাইল সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। আজ থেকে আনরেজিস্টার্ড মোবাইল ফোনের সংযোগও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। তবে সে জন্য প্রয়োজন হবে সংযোগ মূল্য। এ সংযোগ মূল্য কিভাবে নির্ধারিত হবে এবং তা কিভাবে কালেক্ট করা যাবে সে বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিটিআরসিকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে এর ব্যাখ্যা চেয়ে অপারেটররা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন করতে তাদের আরও সময় প্রয়োজন। একটি শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে যুগান্তরকে বলেন, সিম ট্যাক্স নেয়ার কথা আইন অনুসারে এনবিআরের। এ বিষয়ে এনবিআরের কোনো নির্দেশনা নেই। আর বিটিআরসি আমাদের ১ দিন আগে মঙ্গলবার এক নির্দেশনা দিয়ে বলেছে, সিম ট্যাক্স দিয়ে রি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। একদিনে আমরা এ মেকানিজম কিভাবে ঠিক করব? অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিকম বিভাগকে লেখা এক চিঠিতে এ জন্য এক মাস সময় প্রয়োজন হবে বলেও উল্লেখ করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যেসব সংযোগ রেজিস্ট্রেশন করা হবে সেগুলোর জন্য কাস্টমাররা আগেই সিম ট্যাক্স দিয়েছে। পুনরায় তাদের কাছ থেকে সিম ট্যাক্স নেয়া হলে তা ডাবল ট্যাক্সেশন হবে। অন্যদিকে অ্যামটবের পক্ষ থেকে আরেকটি চিঠি দিয়ে বিটিআরসিকে অপারেটররা বলছে, ৩১ মে জিরো আওয়ারেই আনরেজিস্টার্ড সব সংযোগ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কারণ হিসাবে তারা বলছে, আউটগোয়িং লক করে দেয়া সহজ হলেও ইনকামিং বন্ধ করতে হবে মেনুয়ালি। এজন্য অপারেটরদের সময় লাগবে তিন থেকে ৫ দিন। চিঠিতে এও বলা হয়েছে, যদি আনরেজিস্টার্ড সিম রেজিস্ট্রেশনের অপশনই খোলা থাকে, তাহলে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে কাস্টমারকে একটি ভেরিফিকেশন কোড পাঠানো হয়ে থাকে, সে কোডটি কিভাবে পাঠানো হবে? বিটিআরসি এ রকম চিঠি মঙ্গলবার পেয়েছে বলে জানালেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি বলে কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান। এদিকে অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করে দেয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করেছেন টেলিকম আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার অনিক আর হক। ৩১ মে এর শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা হয়নি। আজ ১ জুন এর শুনানি হতে পারে। এদিকে বিটিআরসির আগের নির্দেশনায় নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ৩১ মের পর অনিবন্ধিত সিম টানা দুই মাস বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও সোমবার অপারেটরদের নতুন নির্দেশনা পাঠিয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, এই সিমগুলো যাদের হাতে রয়েছে, তারা যদি তা নিবন্ধন না করেন, তবে আজ থেকে সংশ্লিষ্ট সিম বন্ধ হয়ে যাবে। তবে নিষ্ক্রিয় হলেও তা সচল করার সুযোগ পাবেন তারা।