আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাাহ মাস্টার হত্যা মামলার ১১ আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট আদালতের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আজ এ আদেশ দেন। ১১ আসামি হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির।
একই সঙ্গে আদালত রায়ের বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়। আগামী ১৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে বিষয়টির ওপর শুনানির দিনও ধার্য করা হয়েছে। আজ আবেদনের পক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আসামি পক্ষে এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি করেন।
গত ১৫ জুন হাইকোর্ট এক যুগ আগে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শ্রমিকনেতা গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার দায়ে ৬ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেয়। মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিলের উপর শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ জনাকীর্ণ আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে আসামীদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল, ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১১ জন খালাস পেয়েছে। এছাড়া দুজন বিচার চলাকালে মারা যাওয়ায় তাদের আপিল নিস্পত্তি করে দেয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত অপর একজন পলাতক আসামির আপিল না থাকায় তার ব্যাপারে আদালত কোনো রায় দেয়নি। নিম্ন আদালতে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ২২ আসামির মধ্যে হাইকোর্টে মৃত্যুদন্ড থাকা ছয় আসামি হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু , মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ এবং সোহাগ ওরফে সরু।
মৃত্যুদন্ড থেকে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মোহাম্মদ আলী, আনোয়ার হোসেন আনু, জাহাঙ্গীর ওরফে ছোট জাহাঙ্গীর (পিতা আবুল কাশেম), রতন মিয়া ওরফে বড় রতন, আবু সালাম ওরফে সালাম ও সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু, মশিউর রহমান মশু। যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
মৃত্যুদন্ড থেকে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- আমির হোসেন, বড় জাহাঙ্গীর (পিতা নূর হোসেন), ফয়সাল, লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির, খোকন ও দুলাল মিয়া। বিচারিক আদালতে দেয়া আসামি নুরুল আমিনের যাবজ্জীবন হাইকোর্টেও বহাল রয়েছে। এছাড়া বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া আসামি হাইকোর্টের রায়ে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু সরকার, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি ওহিদুল ইসলাম টিপু (পলাতক) হাইকোর্টে আপিল করেননি। ফলে তার বিষয়ে কোন আদেশ দেয়নি আদালত। আইনজীবীরা জানান এ আসামির দন্ড বহাল রয়েছে। সাজা ও খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে, বাকি ৯ জন পলাতক রয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভা চলাকালে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার সঙ্গে আরো খুন হন ওমর ফারুক রতন নামে আরেকজন। এ ঘটনার পরদিন আহসান উল্লাহ মাস্টারের ভাই মতিউর রহমান বাদী হয়ে টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ জন এবং আসামিপক্ষে দুজন সাক্ষ্য দেন।
মামলায় উভয়পক্ষে সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৩০ আসামির মধ্যে গাজীপুর জেলার বিএনপি নেতা ও ওই সময় জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। এছাড়া খালাস পান অন্য দুই আসামি। বাসস