31 C
Bangladesh
Thursday, June 8, 2023
Homeস্বাস্থ্যএই গরমে যা করবেন, যা করবেন না

এই গরমে যা করবেন, যা করবেন না

গরমে হাঁসফাঁস গোটা দেশ। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে হিটস্ট্রোকসহ বেশ কিছু অসুখে। গরমের সময় কমন কিছু রোগের পাশাপাশি হিটস্ট্রোকের মতো মারাত্মক সমস্যায়ও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ইমেরিটাস ডা. এ বি এম আবদুুল্লাহ 

চলমান গরমে ঘামাচি, জ্বর, অবসাদ, অ্যালার্জি, সূর্যরশ্মিতে চামড়া পুড়ে যাওয়া, ফুড পয়জনিং বা বদহজমের কারণে বমি বা ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যা বাড়ছে।

পানিস্বল্পতা
গরমের সময় পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা বেশি হয়। এই সময় ঘামের কারণে পানির সঙ্গে সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। এতে রক্তচাপ কমে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পানিশূন্যতার জন্য মাথা ব্যথা বা মাথা ঝিমঝিম করে। এ ধরনের সমস্যাকে অবহেলা করা ঠিক নয়। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি, যাদের রোদের মধ্যে বা গরমের মধ্যেই বাইরে কাজ করতে হয়, যারা প্রয়োজনমতো পানি পান করে না বা করার সুযোগ পায় না, তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে। তীব্র পানিস্বল্পতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা কিংবা কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।

তাই এ সময়ে মাঝেমধ্যে পানি পান করা উচিত। রোজাদারদের উচিত ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যাপ্ত ক্রমান্বয়ে পানি পান অব্যহত রাখা। পাশাপাশি ডাব, তরমুজ বা পানিজাতীয় ফলমূল বেশি খাওয়া উচিত। একইভাবে সেহরির সময়ও পানি পানের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। এতে দেহে পানিশূন্যতা রোধসহ পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।

অ্যালার্জি
গরমের সময় ত্বকে ঘামাচি ও অ্যালার্জি হতে পারে। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়ে ঘর্মগ্রন্থি ও নালি ফেটে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। ঘামাচি হয়। আবার ঘাম ও ময়লা জমে ঘর্মনালির মুখ বন্ধ হয়ে ইনফেকশনও হতে পারে। অনেকের ঘামে প্রচুর গন্ধও হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও ঘাম ও ময়লার কারণে ছত্রাকজনিত রোগও এ সময় বেশি হয়।

যারা সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে বেশিক্ষণ থাকে, তাদের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। এতে ত্বক লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া করে, চুলকায় ও ফোসকা পড়ে। মূলত সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিই এর জন্য দায়ী। যারা একটু ফরসা বা যাদের ত্বক অতিসংবেদনশীল বা সেনসিটিভ, তাদের এ সমস্যা বেশি হয়।

ফুড পয়জনিং
খাবার খেয়ে বারবার বমি করা, পাতলা পায়খানা হওয়া, জ্বর, পেট ব্যথা, বমি ইত্যাদি বেশি হলে ধরে নেওয়া যায় ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। গরমের সময় ফুড পয়জনিং বেশি হয়। এ সময় খাবার দ্রুত পচে যায় বলে এতে জীবাণু সহজে সংক্রমিত হয়। এ জন্য বাসি বা পচা খাবার, অস্বাস্থ্যকর ও জীবাণুযুক্ত খাবার, গরমে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খাওয়া উচিত নয়। পাশাপাশি হাত-মুখ, থালা-বাটি ভালোভাবে ধুয়ে, পথেঘাটে তৈরি খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খেলে ফুড পয়জনিংয়ের আশঙ্কা কমে। কারো ফুড পয়জনিং হলে সময়মতো এর চিকিৎসা করা না হলে তীব্র পানিস্বল্পতা, এমনকি রক্তস্বল্পতা সৃষ্টি হয়েও জটিলতা বাড়তে পারে।

এ ধরনের সমস্যা হলে ডাবের পানি, স্যালাইন, শরবত ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া যেতে পারে। রোগী মুখে না খেতে পারলে এবং জটিল পরিস্থিতি মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা ভালো কোন হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

হিটস্ট্রোক
হিটস্ট্রোক মানে হচ্ছে, যখন শরীরের তাপমাত্রা পরিবেশের অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে বেড়ে যায়। কখনো কখনো এই তাপমাত্রা বেড়ে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার কাছাকাছিও যেতে পারে। এটা একটা জটিল পরিস্থিতি, যা হঠাৎ ঘটে। সাধারণত চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এবং ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী বৃদ্ধরা, যাঁদের গরমে সহ্যক্ষমতা কম, কিডনি, হার্ট, লিভার, ডায়াবেটিসের রোগী, যথেষ্ট পানি পান করেন না বা যাঁরা ক্রীড়াবিদ, ব্যায়ামবিদ এবং প্রচণ্ড রোদে কাজ করেন—এমন লোকেরা হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

হিটস্ট্রোকে দেহে পানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হতে পারে), এ সময় তেমন ঘাম হয় না এবং ত্বকের বর্ণ লালচে হয়, নিঃশ্বাস দ্রুত হয়, মাংসপেশির খিঁচুনি হয়, হাত-পা কাঁপে, হৃৎস্পন্দন দ্রুত বা ক্ষীণ হয় এবং রক্তচাপ কমে যায়, বমি বমি ভাব অথবা বমি হয়, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, তীব্র মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করে, পেশি দুর্বল হয়ে আসে, অনেক সময় রোগী পুরো নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায়, এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি কোমা বা শকে চলে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোককে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। দ্রুত ও সঠিকভাবে হিটস্ট্রোকের চিকিৎসা না করালে মৃত্যুও হতে পারে। কেউ যাতে এতে আক্রান্ত না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন :

❏ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ঠাণ্ডা বা বরফ মিশ্রিত পানি দিয়ে শরীর মুছে দিন। বিশেষ করে রোগীর বগল, কুঁচকি, ঘাড়সহ নানা স্থান মুছে দিন।
❏ আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিন, পা একটু উঁচু করে দিন। মাথা একটু নিচের দিকে থাকা ভালো।
❏ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বা ফ্যানের কাছে আনুন বা শীতল পরিবেশে আনুন।
❏ শরীরের কাপড় খুলে দিন বা আলগা করে দিন। মোজা-জুতা অবশ্যই খুলে দিন।
❏ রোগীর জ্ঞান থাকলে পানি, ডাবের পানি, শরবত, জুস বা খাবার স্যালাইন দিন। রোগীকে গোসল করতে বলুন। শরীরে পানি ঢালার ব্যবস্থা করুন।
❏ যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তবে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিন। এ অবস্থায় ঘরে চিকিৎসা করার সুযোগ নেই।

অন্যান্য সমস্যা
গরমের সরাসরি প্রভাব ছাড়াও অন্য কিছু সমস্যা হতে পারে। গরমে পানির তীব্র অভাব থাকায় পানিদূষণ বেশি হয়। মানুষ বাধ্য হয়েও দূষিত পানি গ্রহণ করে। অনেক সময় অজান্তেই জীবাণুযুক্ত পানীয় পান করে। এ কারণে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ‘ই’ ইত্যাদি বেশি হতে দেখা যায়। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য পীড়ায়ও অনেকে আক্রান্ত হয়। এসব রোগ থেকে বাঁচতে যেখানে-সেখানে শরবত, পানি ইত্যাদি পান করবেন না। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে তৈরি শরবত মোটেই পান করবেন না। বরং বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

যা করবেন
❏ যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে চেষ্টা করুন।  
❏ বাইরে বের হলে যতটা সম্ভব সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন। বাইরে থেকে ঘেমে এসে যত দ্রুত সম্ভব গোসল করে ফেলুন।  
❏ পরনের কাপড় হতে হবে হালকা, ঢিলাঢালা ও সুতি। শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে।
❏ সম্ভব হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এটা রোদে পোড়া থেকে সুরক্ষা দেবে।
❏ শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না। এজন্য দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার পানি পান করুন। পানির সঙ্গে সামান্য লবণ, চিনি, লেবুর রস মিশিয়েও খেতে পারেন, যা শরীরে এনার্জি বাড়িয়ে দেবে। বাইরে বেরোলে কোল্ড ড্রিংকসের পরিবর্তে ডাবের পানি পান করুন।
❏ খাবার যেন টাটকা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।  
❏ খাদ্যতালিকায় রাখুন টকজাতীয় খাবার, সবজি ও ফল। ফলমূলের মধ্যে তরমুজ, কলা, আঙুর, সবেদা খেতে পারেন।
❏ রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন টক দই, যা রোদের তাপ থেকে শরীরকে সুস্থ রাখবে।
❏ ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় একেবারে নয়। কফি বা চায়ের পরিবর্তে শরবত খান।
❏ শরীর ঘাম ও ময়লামুক্ত রাখতে প্রতিদিন গোসল করার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে একাধিকবার।  
❏ শ্রমসাধ্য কাজ যথাসম্ভব কম করার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নিন এবং প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করুন।
❏ অতিরিক্ত সূর্যের আলো যেন চোখের ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

যা করবেন না
❏ প্রয়োজন ছাড়া সরাসরি রোদে যাবেন না।
❏  ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত-মসলাযুক্ত খাবার, বাসী খাবার তীব্র গরমে একদম খাবেন না। গরু, খাসির মাংস বা রেড মিট এড়িয়ে মাছ খান।
❏ প্রয়োজন ছাড়া সরাসরি রোদে যাবেন না।
❏ কোমল পানীয় না খেয়ে ঘরে তৈরি ফলের রস, শরবত খান।
❏ চা, কফি বেশি পান করবেন না।
❏ খোলামেলা বা রাস্তায় বিক্রি হওয়া শরবত, কাটা ফল, খাবার খাবেন না। কেননা এ ধরনের পানীয় বা কাটা ফলে জীবাণু থাকে।
❏ এসিতে বেশিক্ষণ থাকবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img