35 C
Bangladesh
Friday, June 2, 2023
Homeখেলাকোহলির মহাকাব্যিক ইনিংসে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় ভারতের 

কোহলির মহাকাব্যিক ইনিংসে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয় ভারতের 

বিরাট কোহলির মহাকাব্যিক ইনিংসে চিরপ্রতিদ্বন্দি পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিষ্মরণীয় জয় দিয়ে অস্টম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো ভারতীয় ক্রিকেট দল। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে সপ্তম ওভারে ৩১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের মধ্যে পড়ে যায় ভারত। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে ৭৮ বলে ১১৩ রানের জুটি গড়েন বিরাট কোহলি ও হার্ডিক পান্ডিয়া। তাতেও ম্যাচ হাতের মুঠোয় ছিলো না ভারতের। চালকের আসনেই ছিলো পাকিস্তান।
কিন্তু ইনিংসের শেষ পর্যন্ত মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতকে ৪ উইকেটের অবিস্মরনীয় জয় এনে দেন কোহলি। ৫৩ বলে ৮২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন কোহলি। এতে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-২এ দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে বিশ^কাপ শুরু করলো ভারত। টান-টান উত্তেজনায় ভরপুর এক ক্রিকেট ম্যাচ দেখলো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিত ৯০ হাজারের বেশি দর্শক ও বিশে^র অগণিত ক্রিকেটপ্রেমিরা।
ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বল হাতে প্রথম ওভারে আক্রমনে আসা পেসার ভুবেনশ^র কুমারের আউটসুইং-ইনসুইং সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পাকিস্তানের ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান আসে, সেটিও ওয়াইড থেকে।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ভারতকে সাফল্য এনে দেন বাঁ-হাতি পেসার অর্শদ্বীপ সিং। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে লেগ বিফোর আউট করেন আর্শদীপ। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে না পারা বাবরকে ফিরতে হয় খালি হাতে।
ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবারও পাকিস্তান শিবিরে ছোবল দেন অর্শদ্বীপ। এবার তার শিকার হন ১২ বলে ৪ রান করা ইন ফর্ম ব্যাটার রিজওয়ান।
৪ ওভারে ১৫ রানে দুই সেরা ব্যাটারকে হারিয়ে মহাচাপে পড়ে পাকিস্তান। এই বিপদ থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে সাবধানী লড়াই শুরু করেন শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ। দ্রুত রান তোলার চেয়ে উইকেট ধরে খেলাতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন তারা। পাওয়ার-প্লেতে ২ উইকেটে ৩২ রান পায় পাকিস্তান।
অষ্টম ওভারে ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামির বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দিলেও রবীচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যর্থতায় জীবন পান মাসুদ।
মাসুদ-ইফতেখারের সাবধানী ব্যাটিংয়ে ১০ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৬০ রানে। ১১তম ওভারে অশি^নের বলে লং-অন দিয়ে ছক্কা মারেন ইফতেখার। ইনিংসের প্রথম ছক্কায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন ইফতেখার। সেই প্রমান মিলে পরের ওভারে।
ভারতের স্পিনার অক্ষর প্যাটেলের করা ১২তম ওভারে ৩টি ছক্কা মারেন ইফতেখার। পুরো ওভার খেলে ২১ রান তুলেন ইফতেখার। একই ওভারে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ইফতেখার ৩২ বল খেলেছেন।
১৩তম ওভারে তৃতীয়বারের আক্রমনে এসেই ভারতকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার মোহাম্মদ সামি। ইফতেখারকে লেগ বিফোর আউট করে জুটি ভাঙ্গেন সামি। ৩৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫১ রান করেন ইফতেখার। তৃতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৭৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন মাসুদ-ইফতেখার।
সামির হাত ধরে দারুন এক ব্রেক-থ্রু আসার পর পাকিস্তানকে চেপে ধরেন হার্ডিক পান্ডিয়া। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শাদাব খানকে ৫ ও শেষ বলে য রান করা হায়দার আলিকে শিকার করেন তিনি।
১৬তম ওভারে ৯ রান করা মোহাম্মদ নাওয়াজকে তুলে নিয়ে তৃতীয় উইকেট পকেটে ভরেন পান্ডিয়া। ১৭তম ওভারে ২ রান করা আসিফ আলিকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট পুরন করেন অর্শদ্বীপ।
১৩ থেকে ১৭তম ওভারের মধ্যে ২৯ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের পথ হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
সামির ১৮তম ওভারে ১০ ও আর্শদীপের ১৯তম ওভারে ১৪ রান তুলে রানের গতি বাড়ান মাসুদ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি। সামিকে ২টি চার মারেন মাসুদ। আর্শদীপকে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন আফ্রিদি।
ভুবেনশ^রের করা শেষ ওভারে আফ্রিদি বিদায় নিলেও হারিস রউফের ছক্কায় ১০ রান পায় পাকিস্তান। দ্রুত গতিতে শেষ ১০ ওভারে ৯৯ রান তোলে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৯ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন দলটি।
৩১ রানে জীবন পেয়ে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে ৫টি চারে ৪২ বলে অপরাজিত ৫২ রান করেন মাসুদ। ৪০ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক করেন মাসুদ। ১টি করে চার-ছক্কায় ৮ বলে ১৬ রান করেন আফ্রিদি।
বল হাতে ভারতের অর্শদ্বীপ ৩২ রানে ও পান্ডিয়া ৩০ রানে ৩টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৬০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমেই পাকিস্তানের পেসারদের তোপের মুখে পড়ে ভারত। দ্বিতীয় ওভারে ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করেন পেসার নাসিম শাহ। চতুর্থ ওভারে পেসার হারিস রউফের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন অধিনায়ক রোহিত। রাহুল-রোহিত ৪ রান করে করেন।
রোহিতের বিদায়ে উইকেটে এসেই বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলেন সূর্যকুমার যাদব। পাওয়ার-প্লের দ্বিতীয় বলে আবারও চার মারেন সূর্য। কিন্তু পরের ডেলিভারিতে রউফের দ্বিতীয় শিকার হলে ১০ বলে ১৫ রানে শেষ হয় সূর্য ইনিংসের।
পাওয়ার-প্লেতে ৩১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে ভারত। এ অবস্থায় ব্যাটিং প্রমোশন পেয়ে পিঞ্চ হিটার হিসেবে উইকেটে আসেন বল হাতে এক ওভারে ২১ রান দেয়া প্যাটেল। কিন্তু কোহলির সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে সপ্তম ওভারের প্রথম বলে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ২ রান করা প্যাটেল। এমন অবস্থায় ৩১ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে ভারত।
এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন কোহলি ও পান্ডিয়া।১১ ওভার শেষে ভারতের রান হয় ৪ উইকেটে ৫৪।
এর পর বাঁ-হাতি স্পিনার নাওয়াজের করা ১২তম ওভার থেকে ২০ রান পায় ভারত। পান্ডিয়া ২টি ও কোহলি ১টি ছয় মারেন। পাকিস্তান ইনিংসে এই ১২তম ওভারে ৩টি ছক্কায় ২১ রান তুলেছিলেন ইফতেখার।
কোহলি-পান্ডিয়ার দৃঢ়তায় ১৫তম ওভারে ভারতের রান ১শ স্পর্শ করলে জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৬০ রান দরকার পড়ে ভারতের।
১৬ ও ১৭তম ওভারে ১২ রান আসে। শেষ ৩ ওভারে ৪৮ রান দরকার পড়ে ভারতের। আফ্রিদির করা ১৮তম ওভারে ৩টি চারে ১৭ রান নেন কোহলি। এমন অবস্থায় শেষ ১২ বলে ৩১ রান দরকার পড়ে ভারতের।
রউফের করা ১৯তম ওভারের প্রথম চার বলে মাত্র ৩ রান নিতে পারেন কোহলি ও পান্ডিয়া। ওভারের শেষ দুই বলে কোহলি ২টি ছক্কা হাকিয়ে শেষ ওভারে জয়ের সমীকরন ১৬ রানে নিয়ে আসেন।
নাওয়াজের করা ঐ ওভারের প্রথম বলে পান্ডিয়া বিদায় নেন। পরের বলে দিনেশ কার্তিক ১ রান নেন। তৃতীয় বলে ২ রান নেন কোহলি। চতুর্থ বলে ছক্কা মারেন কোহলি। বলটি নো-বল থাকায় বাড়তি ১ রান পায় ভারত। ফ্রি-হিটে পরের ডেলিভারি ওয়াইড হয়। আবারও ফ্রি-হিটে পরের ডেলিভারিতে বাই থেকে আসে ৩ রান। শেষ ২ বলে ২ রান দরকার পড়ে টিম ইন্ডিয়ার। পঞ্চম বলে কার্তিক আউট হন। শেষ বলে ওয়াইড দিলে, ১ বলে ১ রান দরকার পড়ে। শেষ ডেলিভারিতে ১ রান নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন অশ্বিন।
৩১ রানে ৪ উইকেট পতনের পর পঞ্চম উইকেটে পান্ডিয়ার সাথে ৭৮ বলে ১১৩ রান যোগ করেন কোহলি। পান্ডিয়া ৩৭ বলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন।
৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৩ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। ৪৩ বলে টি-টোয়েন্টিতে ৩৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করা কোহলি ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন।
পাকিস্তানের রউফ ৩৬ রানে ও নাওয়াজ ৪২ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
আগামী ২৭ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে ভারত। ঐকই দিন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে মাঠে নামবে পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড :
পাকিস্তান : ১৫৯/৮, ২০ ওভার (মাসুদ ৫২, ইফতেখার ৫১, পান্ডিয়া ৩/৩০)। ভারত : ১৬০/৬, ২০ ওভার (কোহলি ৮২, পান্ডিয়া ৪০, রউফ ২/৩৬)।
ফল : ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img