একটু থেকে বেশি কিছুই পাওয়া হলো টাইগার বাহিনীর। আগের দিনে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় অধিনায়ক জয়টাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। যেভাবেই হোক- জয় চাই। মাশরাফির এই চাওয়াটাকে পূরণ করতে উজাড় করে দিয়ে খেলেছে টাইগার বাহিনী। প্রথম জয়ের পর এখন সিরিজ জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মাশরাফি বাহিনী। দলের এ জয়ে স্বয়ং খুশী কোচ হাতুরাসিংহে।
এমনিতেই খুলনার আবু নাসের স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশের জন্য লাকি গ্রাউন্ড বলা হয়। গতকাল এ জয়ের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হলো খুলনা ভেন্যু টাইগারদের জন্য লাকি গ্রাউন্ড। আর তাই তো বাংলাদেশের বছরটি শুরু হলো জয় দিয়ে। জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৬৪ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। দলীয় ৩১ রানের মাথায় সৌম্য সরকার ব্যক্তিগত ৭ রানে আউটের শিকার হন। ব্যাটিংয়ে আসেন সাব্বির রহমান। ৬ দশমিক ৪ ওভারে দলীয় ৫৮ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে। ব্যক্তিগত ২৯ রানে তামিম ইকবাল সিবান্দার বলে কামারার তালুবন্দি হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন। ব্যাটিংয়ে আসেন শুভাগত হোম। ব্যক্তিগত ৬ রানে দলীয় ৭৪ রানের মাথায় শেন উইলিয়ামসের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান শুভাগত হোম। সাব্বির রহমানের সাথে জুটি বাধেন মুশফিকুর রহিম। সাব্বির দলীয় ১১৮ রানে ক্রেমার বলে ম্যালকম ওয়ালারের হাতে ধরা পড়েন। তার ব্যক্তিগত রান ৪৬। ব্যক্তিগত ২৬ রানে মাসাকাদজার বলে সিকান্দার রাজার হাতে ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সাথে জুটি বাধেন নুরুল হাসান সোহান। আট বল হাতে রেখেই ছয় উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষে পৌঁছে যায় টাইগাররা। চার উইকেটের জয় নিয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেলো মাশরাফি বাহিনী।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে বেলা তিনটায় মুখোমুখি হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। টাইগারদের বিপক্ষে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে ১৬৩ রান সংগ্রহ করে। দলীয় সর্বোচ্চ রান আসে মাসাকাদজার ব্যাট থেকে।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টস জিতে জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। টাইগারদের হয়ে বোলিং উদ্বোধন করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাটিংয়ে ওপেন করতে আসেন ভুসি সিবান্দা এবং হ্যামিলটন মাসাকাদজা। প্রথম ওভার থেকে মাত্র দুই রান তোলে সফরকারী ওপেনাররা।
প্রথম ১০ ওভারে সফরকারীদের ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারেননি মাশরাফি, আল আমিন, সাকিব-আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান আর মাহমুদুল্লাহ। ১২তম ওভারে সাকিবের শিকারে সাজঘরে ফেরেন ৪৬ রান করা ভুসি সিবান্দা। তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেয়ার আগে সিবান্দা ৩৯ বলে চারটি চার আর দুটি ছক্কায় তার ইনিংসটি সাজান। আউট হওয়ার আগে ওপেনিং জুটিতে মাসাকাদজাকে নিয়ে ১০১ রান তোলেন সিবান্দা।
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ১২৭ রানের মাথায়। ৮ বলে ১৪ রান করে রানআউটের ফাঁদে পড়েন ম্যালকম ওয়ালার। ১৮তম ওভারে দলীয় ১৫০ রানের মাথায় হ্যামিলটন মাসাকাদজা ক্যারিয়ার সেরা ৭৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। রান আউট হওয়ার আগে ৫৩ বলে ৯টি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
আগের ওভারে মাসাকাদজা ফিরে গেলে পরের ওভারে (১৯তম ওভারে) মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন এলটন চিগুম্বুরাকে (৩ রান)। জিম্বাবুয়ের দলপতিকে বোল্ড করার পরের বলে লুক জঙ্গোকেও (০ রান) বোল্ড করেন তিনি। ফলে, ১৫৩ রানের মাথায় সফরকারীরা ৫ উইকেট হারায়।
শেষ ওভারে আল আমিন আক্রমণে এসে প্রথম বলেই সিকান্দার রাজাকে (৬ রান) ফিরিয়ে দেন। মাহমুদুল্লাহর তালুবন্দি হন তিনি। শেষ বলেও উইকেট তুলে নেন আল আমিন। বোল্ড করে ফেরান শেন উইলিয়ামসকে (২)। ফলে, নির্ধারিত ওভার শেষে ১৬৩ রানেই থেমে যেতে হয় সফরকারীদের।
টাইগারদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজ এবং আল আমিন। এ ছাড়া একটি উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।
এ ম্যাচের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হলো শুভাগত হোম এবং নুরুল হাসান সোহানের। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দলে সুযোগ হয়নি ইমরুল কায়েস, আরাফাত সানি এবং আবু হায়দার রনির।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মোট পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে টাইগাররা। জয়ের পাল্লা লাল-সবুজদের দিকেই। তিনটি ম্যাচে জয়ের বিপরীতে বাকি দুটি ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের টাইটেল স্বত্ব পেয়েছে ওয়ালটন। সিরিজটির নাম দেয়া হয়েছে, ‘ওয়ালটন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সিরিজ বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ২০১৬ পাওয়ার্ড বাই মার্সেল’। ১৭, ২০ ও ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ একই মাঠে গড়াবে। দুপুর ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করছে গাজী টিভি ও স্টার স্পোর্টস-৪।
বাংলাদেশ একাদশ : মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, মুস্তাফিজুর রহমান, নুরুল হাসান সোহান, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শুভাগত হোম, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল ও আল-আমিন হোসেন।
জিম্বাবুয়ে একাদশ : ভুসি সিবান্দা, হ্যামিলটন মাসাকাদজা, শেন উইলিয়ামস, পিটার মুর, সিকান্দার রাজা, ম্যালকম ওয়ালার, এলটন চিগুম্বুরা, ব্রায়ান ভিটোরি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, লুক জঙ্গো ও গ্রায়েম ক্রেমার।
স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ১৬৩/৭, ২০ ওভার (মাসাকাদজা ৭৯, সিবান্দা ৪৬, মোস্তাফিজ ২/১৮, আল আমিন ২/২৪)।
বাংলাদেশ : ১৬৬/৬, ১৮.৪ ওভার (সাব্বির ৪৬, তামিম ২৯, মুশফিকুর রহিম ২৬, সাকিব আল হাসান ২০, ক্রেমার ২/৩২)।
ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : চার ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (জিম্বাবুয়ে)।