24 C
Bangladesh
Sunday, March 26, 2023
Homeজাতীয়ট্যাবলেট খেলেই নাকি সুপার সোলজার হয়ে যায় জঙ্গিরা

ট্যাবলেট খেলেই নাকি সুপার সোলজার হয়ে যায় জঙ্গিরা

image (1)২০১৪ সালে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রচার করে সিএনএন। এতে এক আইএস জঙ্গিকে একটি বড়ি সম্পর্কে বিবরণ দিতে দেখা যায়। বড়িটি সম্ভবত ক্যাপ্টাগন। ওই ভিডিওতে কারিম নামের এক জঙ্গিকে বলতে শোনা যায়, তারা আমাদেরকে ওষুধ দেয়। এটা খাওয়ার পরই আমরা আমাদের নিজের জীবনের পরোয়া না করেই যুদ্ধের ময়দানে চলে যাই। এটা খেলে আমরা সুপার সোলজার হয়ে যাই। মধ্যপ্রাচ্যের আইএস এটা ব্যবহার করে।

তুরস্ক থেকে এক জঙ্গিকে দেশে ফিরিয়ে আনার   পর সেই জঙ্গি বলে, “আমার বাবা  নেই, মা  নেই। আমার কেউ  নেই। আমার  কেবল আছে আল্ল­াহ!” এই ধরনের ছেলেদের মস্তিষ্ক বিকৃত করা হয়েছে ক্যাপ্টাগন নামক এক ধরনের মাদক দিয়ে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, গুলশানের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে সাতজনের ময়নাতদন্ত আমি করেছি। এদের মধ্যে দু’জন নারীও রয়েছে। তবে মৃতদের শরীরের আঘাত দেখে আমি শিহরিত হয়েছি। ড্রাগ গ্রহণ ছাড়া এমন নিষ্ঠুরভাবে কাউকে হত্যা করা যায় না। সাতজনের মৃতদেহ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

দেশে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জঙ্গিবাদ নিয়ে। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা ছেলেরা কেমন করে পাল্টে গেল? কিভাবে হয়ে উঠল নৃশংস ঘাতক? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। জানা গেছে, হামলার আগে তাদেরকে ভয়ঙ্কর নেশাজাত দ্রব্য দেয়া হয়। নেশায় বুঁদ হয়েই যাবতীয় নৃশংসতা ঘটায় তারা।

আইএস নিয়ে গবেষণাধর্মী বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্যাপ্টাগন ও অ্যাম্ফিটামিন নামের বড়ি উচ্চ ক্ষমতার নেশায় আসক্ত হয়েই জঙ্গিরা বিবেক বিবেচনা বর্জিত নানা নৃশংসতায় মেতে উঠছে। এই নেশাজাত দ্রব্যটি গ্রহণের কারণে জঙ্গিদের উন্মত্ততা আরও বেড়ে যায় এবং মৃত্যুর পরোয়া না করেই তারা যে কারও ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।

মনোচিকিত্সকরা জানিয়েছেন, ওষুধটি খেলে মানুষের দেহমনে এক ধরনের উদ্দাম ও সুখ সুখ ভাব সৃষ্টি হয়। ওষুধটি খাওয়ার পর লোকে বেশি কথা বলা শুরু করে, ঘুম হারাম হয়ে যায়, খাওয়া-দাওয়ার রুচি কমে গেলেও শরীরে ব্যাপক শক্তি অনুভূত হয়।

জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সাল থেকেই অ্যাম্ফিটামিন নামক ওষুধের উত্পাদন বেআইনি ঘোষণা করা হয়। এরপরও মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অ্যাম্ফিটামিনের প্রসার ঘটে চলেছে। সৌদি আরব, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কের ল্যাবরেটরিগুলোতে এ ট্যাবলেটের উত্পাদন ও সরবরাহ হচ্ছে। আইএসের মাধ্যমে এসব নেশাজাত ট্যাবলেট এখন বাংলাদেশেও জঙ্গিদের হাতে হাতে পৌঁছেছে। এসব ট্যাবলেটের ভয়ঙ্কর নেশাতেই একশ্রেণির যুবক জঙ্গিবাদী নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যরা ইয়াবা সেবন করতো যুদ্ধের ভয়াবহতা ও হত্যাযজ্ঞের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য। বর্তমানে আইএস জঙ্গিরা তেমনই ক্যাপ্টাগন ট্যাবলেটকে বেছে নিয়েছে। এর পাশাপাশি মারা গেলে জান্নাতের লোভ  দেখানো হয় তাদেরকে।

মাদকাসক্ত আর ধর্মীয় বিভ্রান্তির কবলে পড়া বিভিন্ন দেশের তরুণ-তরুণীদের সংগ্রহ করে আইএস জঙ্গি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ইরাক, সিরিয়ায় সম্মুখযুদ্ধে মৃত আইএস যোদ্ধাদের পকেটে ক্যাপ্টাগন পাওয়া যায়। সুইসাইড মিশনগুলোর আগে দীর্ঘ কয়েকমাস তাদের প্রস্তুতি নিতে হয়। এ সময়ে তাদের নিয়মিত ক্যাপ্টাগন পিল খাওয়ানো হয়। ঢাকায় মৃত জঙ্গিদের পূর্বেকার ছবি ও কয়েক মাস পরে হামলা করে নিহত ছবির চেহারা বা অবয়বগত কিছু পার্থক্যের মূল কারণ এই ক্যাপ্টাগন।

সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ঘটনা গুলশান ট্র্যাজেডি। এটা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। চলছে জঙ্গিদের নিয়ে বিস্তর গবেষণাও। গবেষণা চলছে সেসব যুবককে নিয়েও যারা তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা হারিয়ে এরকম একটা ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের জড়িয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো তারা কীভাবে মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করে? কথাবার্তায় মোটিভেশন করার মাধ্যমে ব্রেইন ওয়াশ সম্ভব না হলেও কেমিক্যালের মাধ্যমে ব্রেইন ওয়াশ করা সম্ভব বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

ক্যাপ্টাগন ও অ্যাম্ফিটামিন জাতীয় বিভিন্ন ধরনের সিডেটিভ ড্রাগ রয়েছে যা দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়। জঙ্গিদের কাছে এগুলো খুব সহজলভ্য আর তারা এভাবেই গাছের উপাদান দিয়ে তৈরি এসমস্ত ড্রাগ প্রয়োগ করে থাকে। জঙ্গিরা যে কোনো উপায়ে এই যুবকদের নিজেদের কব্জায় নিয়ে নেয়। এরপর তাদের উপর মাদক প্রয়োগ করে যা করতে বলে, তারা তাই করে।

ক্যাপ্টাগন হলো উচ্চমাত্রার যৌন উত্তেজক পিল। এটি সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরাকে সবচেয়ে জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গোপন স্থানে এ ধরনের উত্তেজক ওষুধ তৈরির পর চোরাচালানের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে লেবানন-সিরিয়া সীমান্তে ১ কোটি ২০ লাখ ক্যাপ্টাগন পিলের বড় একটি চালান আটক করে। একই বছর তুরস্ক ৭০ লাখ পিল আটক করে। গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাই সরকার সাড়ে চার মিলিয়ন পিল আটক করে।

জানা গেছে, সৌদি আরবে বহু লোক ক্যাপ্টাগন ও অন্যান্য ধরনের মাদকে আসক্ত। জিহাদিরা সারা বিশ্বে এ ক্যাপ্টাগন পিল সেবন করছে, যে কারণে তারা মৃত্যুর ভয় করছে না। এ ছাড়া ধর্ম সম্পর্কে এক ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা সহজেই জঙ্গিদের খপ্পরে পড়ে। এর অন্যতম কারণ- ক্যাপ্টাগন সেবন।

প্রখ্যাত মনোরোগ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, জঙ্গিদের মধ্যে নৃশংসতা, ক্ষিপ্রতা, বিবেকবর্জিত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আজানের সময় মানুষকে জবাই করে হত্যা করার মতো কাজ করতেও দেখা যাচ্ছে। এই হত্যার পর তাদের নাকি বেহেশত নিশ্চিত হয়ে গেছে- এমন বদ্ধমূল ধারণাও রয়েছে জঙ্গিদের মধ্যে। তাদের বিষয়ে গবেষণার ফলাফল এবং সেই সঙ্গে আরো কোনো তথ্য আছে কীনা, সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মনোবিজ্ঞানীদের মতামত চেয়ে তাদেরকে চিঠি দিয়েছেন ডা. মোহিত কামাল। (ইত্তেফাক)

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Recent Comments