দেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব না দিলে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব নয়। এ জন্য আমি সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ’
শনিবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সম্মেলন ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এফবিসিসিআই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি না হতো তবে আমাদের দারিদ্র্যের হার আরও কমতো। দেশের এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বেসরকারি খাতের অবদান। ’ এ সময় সব পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্যবসায়ীদের সবসময় আত্মবিশ্বাসী থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন্স অথরিটি (বেজা) ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশে রয়েছে একটি প্রশিক্ষণযোগ্য জনগোষ্ঠী। ১১ কোটি ৪০ লাখ নাগরিক যেকোনো বিনিয়োগে অবদান রাখতে প্রস্তুত। ২০২৫ সাল নাগাদ ডিজিটাল খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। কৃষি ও ব্যবসা খাত বাংলাদেশের একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত। দেশের ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আমরা হতাশ হতে চাই না। সরকার যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে, সেটা আমি কথা দিচ্ছি। ’
বিদেশি ব্যবসায়ীদের এ দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সম্মেলনে বিদেশি ব্যবসায়ী যারা এসেছেন, বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে এখানে বিনিয়োগ করবেন। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি। যুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী জাতি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। ’ সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে বিদেশিদের উদাত্ত আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতি আকার হবে ১ ট্রিলিয়ন (১০০০০০ কোটি) ডলার। ওই সময়ে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। ’
নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পারি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সেটা প্রমাণ করেছি। ’
গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ জেলা রাজধানী ঢাকা এবং বাকি অংশের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত হয়।
বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘সেতুটি চালুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে শুধু রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি, এর ফলে দেশের অর্থনীতিও বেগবান হবে। ’
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের ২০০ টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী নেতারা শীর্ষ এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত আছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা।