27 C
Bangladesh
Saturday, April 1, 2023
Homeজাতীয়নিরাপত্তা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়, এটা সামগ্রিক ব্যাপার, যার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে...

নিরাপত্তা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়, এটা সামগ্রিক ব্যাপার, যার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে

obaidul.k_54883বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার মানুষ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, লেখক, প্রকাশক, ব্লগার এবং ভিন্ন ধর্মের মানুষ হত্যার ঘটনায় দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত৷ অথচ পুলিশ এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে নাগরিকদেরই নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে বলছে৷

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরার বিক্রি বেড়েছে৷ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান তো বটেই, যাদের একটু সামর্থ্য আছে তারাই তাদের নিরাপত্তা নানাভাবে বাড়াতে চান৷ এরসঙ্গে নিরপত্তা সরঞ্জাম যেমন আর্চওয়ে, সিকিউরিটি ডিভাইস-এর বিক্রিও বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোর সিকিউরিটি সার্ভিসের চাহিদাও৷

ঢাকার অনেক এলাকাতেই এখন নিজস্ব নিরপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে৷ যেমন নাখালপড়ার একটি এলাকার সড়কের দুই প্রবেশপথে স্থানীয়রাই চেকপোস্ট বসিয়েছে৷ রাত ১০টার পর শুধুমাত্র ঐ এলাকার বাসিন্দারা ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেন না সেখানে৷ এ রকম ব্যবস্থা আছে উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডিসহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায়৷

এছাড়া ঢাকায় এখন দেহরক্ষী বা গানম্যানও পাওয়া যায়৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতে করে কি নিরাপত্তা বাড়ছে? নগরবাসী বা দেশের মানুষ কি নিরাপদ বোধ করছেন? তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আস্থার ভাব আছে কি?

নাখালপাড়ারই আব্দুল হানিফ পাটোয়ারী জানান, ‘‘না, এ সবের পরও আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷ আমি নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছি৷ কিন্তু ভরসা পাচ্ছি না৷ পুলিশের ওপর ভরসা নেই বলেই তো নিজেরা এলাকায় নিরাপত্তা টিম বসিয়েছি৷ কিন্তু তারা কতটুকু পারবে, রাষ্ট্র-সরকার বা পুলিশ যদি নিরাপত্তা না দেয়?”

ঢাকার কলাবাগানে গে ম্যাগাজিন রূপবান-এর সম্পাদক জুলহাস মান্নানসহ দু’জন নিহত হওয়ার পর, বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান শহীদুল হক বলেন, ‘‘নাগরিকদের নিজেদেরও নিরপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে৷ পুলিশ তৃণমূলে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে না৷”

মহানগর পুলিশ প্রধান আছাদুজ্জামান মিয়া আক্ষেপ করে জানান, ‘‘জুলহাসের এক ঘাতককে পুলিশ জাপটে ধরেছিল৷ কিন্তু এলাকার মানুষ সহায়তা করেনি বলে তাকে শেষ পর্যন্ত আটকে রাখা যায়নি৷”

কলাবাগানে ঘটনাস্থলের পাশেই একটি দোকানের মালিক আব্দুর রহিম৷ তিনি এর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘আমি পুলিশের ওপর আস্থাশীল নই৷ সহায়তা করতে গেলে হয়ত আমাকেই পরে থানায় ধরে নিয়ে যাবে৷ আবার আমি সাক্ষী দিতে গেলে আমাকে কোনো নিরাপত্তা দেবে না৷ তাহলে কীভাবে সহায়তা করবো?”

ঐ এলাকার অপর এক বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের কথায়, ‘‘জুলহাস মান্নানদের বাসা তো সুরক্ষিত৷ ভালো গেট, গেটে দারোয়ান, কেয়ারটেকার, সিসি ক্যামেরা সবই তো ছিল৷ কিন্তু দুর্বৃত্তরা দারেয়ানকেও কুপিয়েছে৷ জুলহাসের হত্যা তো ঠেকানো গেল না৷ এখন আমাদের সবাইকে কি বন্দুক আর বডিগার্ড নিয়ে থাকতে হবে!”

মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিরাপত্তা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়৷ একটি দেশের নাগরিকরা আলাদা-আলাদাভাবে নিরাপদ থাকতে পারেন না৷ এটা একটা সামগ্রিক ব্যবস্থা৷ নিজস্ব বা ব্যক্তিগত পর্যায়ের নিরপত্তা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷ সেই বোধ থেকেই তো মানুষ ঘরে তালা মারে বা বাসায় সিকিউরিটি গার্ড রাখে৷ কিন্তু এ দিয়ে তো আর তার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না৷ সেটা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হয়৷ তার উপায় হলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা এবং আন্তরিকতা ও আইনের শাসন৷ যদি এটা নিশ্চিত হয় যে কেউ অপরাধ করলে ধরা পড়বে এবং বিচারে তাকে শাস্তি পেতে হবে, তাহলে অপরাধ কমে যাবে৷ এটা নিশ্চিত না হওয়ার কারণেই অপরাধীরা এতটা বেপরোয়া৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকার বা রষ্ট্র যদি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ এবং আস্থার ভাব গড়ে তুলতে পারে, তাহলে বাকিটা নাগরিকরাই করতে পারে৷ কিন্তু প্রথম কাজটিই তো হচ্ছে না৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘গত ১৪ মাসে ৩৫টি টার্গেট কিলিং-এর ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে৷ এটা তো নাগরিকরা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে থামাতে পারবে না, সম্ভবও নয়৷ এটা ঠেকানো বা অপরাধীদের আটক করে আইনের হাতে তুলে দেয়া তো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ৷ তারা সেই কাজ করতে পারেনি, পারছে না৷ ফলে নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বোধের সৃষ্টি হচ্ছে৷ আর দায় এড়াতে পুলিশ এখন নানা ধরনের কথা বলছে৷” (ডিডব্লিউ)

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Recent Comments