নয় ঘন্টা ধরে রাস্তার উপর দাঁড়িয়েছিল ২৫ টনের লরিটি। পুলিশের চোখেও পড়েছিল। রবিবার বা অন্য ছুটির দিন প্যারিসের যে কোনও বড় রাস্তায় এত বড় লরি চলাচল বারণ হলেও ওই লরিটিকে নিসের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়নি পুলিশ। নয় ঘন্টা পর সেই লরিই পিষে দিয়ে গেল উৎসবরত জনতাকে। ন’ঘণ্টা ধরে রাস্তার উপর দাঁড়িয়েছিল ২৫ টনের লরিটি। পুলিশের চোখেও পড়েছিল। রবিবার বা অন্য ছুটির দিন প্যারিসের যে কোনও বড় রাস্তায় এত বড় লরি চলাচল বারণ হলেও ওই লরিটিকে নিসের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়নি পুলিশ। ন’ঘণ্টা পর সেই লরিই পিষে দিয়ে গেল উৎসবরত জনতাকে।
গতকাল নিসের ‘প্রোমনাদ দেজংলে’র রাস্তায় পুলিশ যতবার লরিটিকে দেখেছে, চালককে প্রশ্ন করেছে যে সেখানে সে কী করছে। সেই চালক প্রতিবারই জানিয়েছে, সে আইসক্রিম বিলি করছে। সারাদিন ওই রাস্তায় আইসক্রিম বিলি করার পর রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ লরি নিয়ে রওনা দেয় সে। পুলিশ সূত্রের খবর, আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও ওই লরিতে মজুত ছিল একটি করে খেলনা রাইফেল, পিস্তল এবং গ্রেনেড! কিন্তু সন্দেহ না-হওয়ায় পুলিশ লরিটির ভিতরে তল্লাশি চালায়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘাতক-চালক নিস শহরেরই বাসিন্দা, তিউনিশীয় বংশোদ্ভূত এক ফরাসি। বয়স ৩১। নাম মোহামেদ লাহুয়াইয়েজ বুলেল। ঘাতকের সঙ্গে আইএসের যোগ রয়েছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। ফরাসি সংবাদপত্র ‘নিস ম্যাতঁ’ সূত্রের খবর, দু’দিন আগে লরিটি ভাড়া করেছিল মোহামেদ। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটে আসা লরিটি নিসের রাস্তায় টানা আধঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালায়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘আমি ওর মুখ দেখেছিলাম। ওই কাণ্ড ঘটানোর সময় সে হাসছিল! আর গুলি করার সময় বলছিল আল্লা হু আকবর।’’
লরি থেকে উদ্ধার হওয়া কাগজপত্রে মোহামেদের বাড়ির ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে একটি মোবাইল এবং একটি ক্রেডিট কার্ডও। নিসের একটি ফ্ল্যাটের ১২ তলায় থাকত সে। আজ সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তার বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, আলমারি খোলা, জিনিসপত্র মেঝেতে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। তার প্রতিবেশীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁরা জানিয়েছেন, মোহামেদ বরাবরই খুব চুপচাপ। কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলত না। মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে যেত। তার একটি ‘ওয়ার্ক ভ্যান’ও ছিল। বেশিরভাগ সময় শর্টস পরত। নানারকম জুতোও পরত ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে। এক প্রতিবেশী অভিযোগ করেছেন, মোহামেদ নাকি তাঁর মেয়েকে উত্যক্ত করত। তবে সকলেরই বক্তব্য, মোহামেদকে দেখে কখনওই ধার্মিক মনে হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মোহামেদ এর আগেও অপরাধ করেছে। মত্ত অবস্থায় লরি চালিয়ে কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়েছিল সে। জেলেও গিয়েছিল। এছাড়াও অকারণে অস্ত্র ব্যবহার, চুরি, পারিবারিক হিংসা— এই ধরনের অপরাধও করেছে একাধিকবার। গত ২৭ জানুয়ারি তাকে একটি ‘পাব’ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তারপর মার্চ মাসে অস্ত্র নিয়ে এক মোটরবাইক আরোহীকে ভয় দেখানোর জন্য তার ছ’মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু ছ’মাসের আগেই সে জেল থেকে বেরিয়ে যায়। তবে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের সঙ্গে তার যোগাযোগের কোনও প্রমাণ পুলিশের কাছে ছিল না। মোহামেদের এক বন্ধুও জানিয়েছেন, সে একবার মত্ত অবস্থায় লরি চালিয়ে চারটি গাড়িকে ধাক্কা মারে। কয়েকজন আহতও হয়েছিলেন। ‘সালসা’ এবং শরীরচর্চার নেশা ছিল তার। হামলার মাত্র কয়েকদিন আগেই বড় লরি চালানোর ‘পারমিট’ পেয়েছিল সে।
মোহামেদের এক আত্মীয় পুলিশকে জানিয়েছেন, সে বিবাহিত। স্ত্রীকে মারধর করত। তিন সন্তানও রয়েছে তার। গত দু’বছর ধরে সে স্ত্রীয়ের থেকে আলাদা থাকত। বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়াও চলছিল।
একটি সূত্রের দাবি, পুলিশ ইতিমধ্যেই মোহামেদের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ঘাতকের আত্মীয় এ-ও জানিয়েছেন, সে নিয়মিত মদ্যপান করত। মোহামেদ কোনওদিন ধর্মস্থানে যায়নি। বরং পানশালা, নাইটক্লাবেই তাকে বেশি দেখা যেত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহিলার সঙ্গেও তাকে দেখা গিয়েছে।