27 C
Bangladesh
Saturday, April 1, 2023
Homeকোরআনপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী

প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী

পুরুষদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনেন, তাঁর সাথে নামায আদায় করেন, এবং তাঁর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া ওহী মনে-প্রাণে গ্রহণ করেন, তিনি ছিলেন তাঁরই চাচা আবু তালিবের পুত্র আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখন তাঁর বয়স মাত্র দশ বছর।

হযরত আলীর (রা) ওপর আল্লাহর একটা বিশেষ অনুগ্রহ লক্ষ্য করা য়ায়। আল্লাহ যে তাঁর কল্যাণ চেয়েছিলেন এবং সে জন্য তাঁর উযোগী ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন, সেটা তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্ববর্তী ঘটনাবল িথেকে বুঝা যায়। কুরাইশদের তখন ঘোর দুর্দিন। বহু সন্তনের পিতা হওয়ার আবু তালিব নিদারুণ আর্থিক সংকটে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেক চাচা ছিলেন আব্বাস। তিনি ছিলেন বনু হাশিম গোত্রের মধ্যে সচ্ছলতম ব্যক্তি। তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামস বলেন, “হে আব্বাস, আপনার ভাই আবু তালিক অধিক সন্তানের ভারে জর্জরিত। দেখতেই পাচ্ছেন মানুষ কি ভীষণ দুর্দশায় ভুগছে। আসুন, আমরা তাঁর সন্তান ভার লাঘব করি। তাঁর পুত্রদের মধ্য হতে একজনের দায়-দায়িত্ব আমি গ্রহণ করি আর অপর একজেনর দায়িত্ব আপনি গ্রহণ করুন। এভাবে দু’টি সন্তানের দায়-দায়িত্ব থেকে তাঁকে রেহাই দেয়া যাবে।”

আব্বাস বললেন, “ঠিক আছে, চলো যাই।”

অতঃপর তাঁরা উভয়ে গিয়ে আবু তালিবকে বললেন, “যতদিন দেশবাসী বর্তমান আর্থিক সংকট থেকে মু্ক্ত হচ্ছে না ততদিনের জন্য আমরা আপনার সন্তানদের ভার লাঘব করতে চাই্।” আবু তালিব বললেন, “তোমরা আকীলকে আমার কাছে রেখে যাও। তারপরে যাকে খুশী নিয়ে যাও।”

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলীকে নিলেন এবঙ তাঁকে নিজ পরিবারের  অন্তর্ভূক্ত করলেন। আর আব্বাস নিলেন জাফরকে এবং তাঁকে তিনি স্বীয় পরিবারের অন্তর্ভূক্ত করলেন। এরপর আলী (রা)রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তির সময় পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিলেন। তাই নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে আলী তাঁর ওপর ঈমান আনলেন ও তাঁকে নবী হিসেবে মনে-প্রাণে মেনে নিয়ে ত৭ার অনুসরণ করতে লাগলেন।

কোন কোন ঈতিহাসিকের মতে, নামাযের সময় উপস্থিত হলেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দুর্গম গিরিগুহায চলে যেতেন, আর তাঁর সাথে আলীও যেতেন। কিন্তু এ কাজটি তাঁর পিতা, চাচা ও গোত্রের সকলের অগোচরে সঙ্গেপনে করতে থাকলেন। সেখানে তাঁরা দু’জনে গিয়ে নির্ভতে নামায পড়তেন এবং সন্ধা হলে বাড়ী ফিরতেন। এভাবেই তাঁরা আল্লাহর ইচছায বেশ কিছুদিন কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। একদিন আবু তালিব তাঁদের দুজনকে নামাযরত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেকে জিজ্ঞেস করলেন, “ভাতিজা, এটা আবার কোন দীন (ধর্ম) যার অনুসরণ তুমি করছো?” তিনি বললেন, “চাচা, এটা আল্লাহর দীন, তাঁর ফেরেশতাদের দীন, তাঁর নবী-রাসূলদের দীন। আর বিশেষতঃআমাদের পিতা ইবরাহীমের দীন। আল্লাহ আমাকে রাসূল বানিয়েছেন এবং এই দীনেসহ মানব জাতির কাছে পাঠিয়েছেন। হে চাচা, আমি যত লোককে এই দীনের শিক্ষা দিয়েছি এবং যত লোককে এই জীবন বিধান গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছি তাদের সকলের চাইতে আপনি এই দাওযাত পাওয়ার অধিক হকদার। আর যত লোক আমার এই দাওয়াত গ্রহণ করেছে এবং আমাকে কাজে সহযোগিতা করেছে তাদের তুলনায় আপনারই বেশী কর্তব্য এ আহ্বানে সাড়া দেয়া ও সহযোগিতা করা।”

আবু তালিব ললেন, “ভাতিজা, আমি আমার পূর্বপুরুষদের ধর্ম ও িরীতিনীতি বর্জন করতে পারি না্ তবে আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বেঁচে৬ আছি তোমার এ তৎপরতার দরুন তোমাকে কোন অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না।”

এরপর ইসলাম গ্রহণ করেন যালিদ ইবনে হারিসা ইবনে শুরাহবীল ইবনে কা’ব ইবনে আবদুল উযযা। ইতিপূর্বে খাদীজার ভ্রাতৃষ্পুত্র হাকীম ইবনে হিযাম ইবনে খুয়াইলিদ সিরিয়া থেকে যায়িদ ইবনে হারিসাসহ বেশ কয়েকজন ক্রীতদাস নিয়ে আসেন।েএকদিন তার ফুফু খাদীজা তার কাছে এলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাদীজার বিয়ে হয়ে গেছে। হাকীম বললেন, “ফুফু, আপনি এই দাসগুলোর মধ্যে থেকে যে কোন একজনকে পছন্দ করুন। যে ছেলেটিকেই আপনি পছন্দ করবেন তাকেই আমি আপনাকে দিযে দেব।” তিনি যায়িদকে পছন্দ করে নিয়ে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজার কাছে যায়িদকে দেখে তাকে পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতেই খাদীজা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপহপার হিসেবে তাকে দিযে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দাসত্ব শৃংখর থেকে মুক্ত করে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন। এটা ছিল নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বের ঘটনা।

সহীহ বুখারীর লাইলাতুল কদরের মর্যাদা

এরপর ইসলাম গ্রহণ করেন আবু বাকর ইবনে আবু কুহাফা। তাঁর আসল নাম আতীক। আর আবু কুহাফার প্রকৃত নাম ছিল উসমান। আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণ করার পর তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন এবং আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনার জন্য সকলকে দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তিনি ছলেন তাঁর গোত্রের অত্যন্ত জনপ্রিয়, বন্ধুবৎসল ও অমায়িক ব্যক্তি। কুরাইশদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ও তাদের বংশপরিচয় সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত্ কুরাইশদের ও তাদের ভালো-মন্দ ও কল্যাণ-অকল্যাণ সম্পর্কে তাঁর মত বিচক্ষণ জ্ঞানী আর কেউ ছিল না। তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী, দানশীল ও চরিত্রবান লোক। গোত্রেরৈ লোকেরা তাঁর কাছে বীড় জমাতো। তাঁর অমায়িক মেলামেশা, পাণ্ডিত্য ও ব্যবসায়িক দক্ষতার কারণে অনেকেই তাঁর সাথে বন্ধুত্বও সখ্যতা স্থাপন করতো। এ জন্য গোত্রের মধ্য থেকে যারা তাঁর সান্নিধ্যে আসতো ও  তাঁর নিকট অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল, তিনি তাদের কাছে ইসলামের দাওযাত দিতে লাগলেন। তাঁর দাওয়াতে একে একে ইসলাম গ্রহণ করলেন উসমান ইবনে আফফান, যুবােইর ইবনুল আওয়াম, আবদুর রহমান ইবনে আউফ, সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস ও তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ। এই পাঁচজন এবং আবু বাক্র, আলী ও যায়িদ- সোট আটজনই ছিলেন প্রথম মুসলিম। তাঁরাই প্রথম নামায কায়েম করেন ও ইসলামকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেন।

রাসূলুল্লাহর (সাঃ) আন্দোলন প্রতিরোধে উতবা কাফেরের ফন্দি

এরপর আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, আবু সালামা ইবনে আবদুল আসাদ, আরকাম ইবনে আবুর আরকাম, উসমান ইবনে মাযউন এবং তাঁর দুই ভাই কুদামা ও আবদুল্লাহ, উবাইদা ইবনে হারেস, সাঈদ ইবনে যায়িদ ইবনে আমর ও তাঁর স্ত্রী উমার ইবনুর খাত্তাবের বোন ফাতিমা, আসমা বিনতে আবু বাকর ও আয়িশা বিনতে আবু বাকর বাক্র (আয়িশা তখন অল্পবয়স্কা বালিকা), খাব্বাব ইবনে আরাত,েউমাইর ইবনে আবু ওয়াক্কাস, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, মাসউদ, মাসউদ ইবনে কারী, সালীত ইবনে আমর, আইয়াশ ইবনে আবু রাবীয়া ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে সুলামা, খুনাইস ইবনে হুযাফা, আমের ইবনে রাবীয়া, আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশ ও তাঁর ভ্রাতা আবু আহমদ, জাফর ইবনে আবু তালিব ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস, হাতেব ইবনে হারেস ও তাঁর স্ত্রী ফাতিমা বিনতে মুজাল্লাল, তাঁর ভ্রাতা হুতাব ও তাঁর স্ত্রী ফুকাইহা বিনতে ইয়াসার, মা’মার ইবনে হারেস, সায়েব ইবনে উসমান ইবনে মাযউন, মুত্তালিব ইবনে আযহার ও তাঁর স্ত্রী রামলা বিনতে আবু আউফ, নাহহাম তথা নাঈম ইবনে আবদুল্লাহ, আমের ইবনে ফুহাইরা, খালিদ ইবনে সাঈদ ইবনুল আস ত তার স্ত্রী আমীনা বিনতে খালাফ, হাতেব ইবনে আমর, আবু হুযাইফা ইবনে উতবা ইবনে রাবীয়া, ওয়াকিদ ইবনে আবদুল্লাহ, বুকাইর ইবনে আবদে ইয়ালীলের পুত্র খালিদ, আমের আকেল ও ইয়াস, আম্মার ইবনে ইয়াসার ও সুহাইব ইবনে সিনান রুমী২৩ ইসলাম গ্রহণ করেন।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Recent Comments