দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রক্তের হোলি খেলা দেশের জনগণ কখনও ভুলে যাবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অায়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, বিএম মোজাম্মেল হক এমপি ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এমপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কেন দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করলেন, যানবাহনে পুড়িয়ে দিলেন, সরকারী-বেসরকারী সম্পদে অগ্নি সংযোগ করলেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষাদানে বাধা দিলেন সে প্রশ্নের জবাব আমরা পাইনি।
তিনি বলেন, খালেদ জিয়া গত বছরের জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করলেন, ১৫শ’ মানুষকে মারাত্মকভাবে আহত করলেন, ৭শ গাড়ী পুড়িয়ে দিলেন, রেলসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে দিলেন না।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, গণতন্ত্রের জন্য মানুষ হত্যা করতে হয় না, গাড়ীতে আগুন দিতে হয় না।
বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আসুন, শান্তিপূর্ণভাবে দেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। দেশের একটি মানুষকেও জীবন দিতে হবে না।’
সমাবেশে যোগদানকারী হাজার হাজার মানুষকে দেখিয়ে তিনি বলেন, এ সমাবেশ করার জন্য আমাদের তেমন প্রস্তুতি ছিল না। সামান্য প্রস্তুতিতে সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে।
আশরাফ বলেন, এ দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তি। তার নেতৃত্বে দেশ যেমন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি তার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
আমির হোসেন আমু বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ের মতো দেশে পাকিস্তানী ভাবধার রাজনীতি চালু করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারী নির্বাচন না হলে, অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় আসত। আর তারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে দিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মতো আবারো পাকিস্তানী ভাবাদর্শের সরকার প্রতিষ্ঠিত হতো।
আমু বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সাংবিধানিক শূণ্যতা দূর করে সরকারই গঠন করেননি, বরং রাষ্ট্রকেও সুরক্ষিত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ৫ জানুয়ারী তাই শুধু গণতন্ত্র রক্ষার দিন নয়, সাংবিধানিক শূণ্যতা তৈরির ষড়যন্ত্র প্রতিরোধেরও দিন।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের পথে থাকলে তাকে কেউ কোন কিছু বলবে না। পৌর নির্বাচন হয়েছে। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, তারা গণতন্ত্রের পথে থাকলে ২০১৯ সালে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনে অংশ নিলেও কেউ কোন কিছু বলবে না। তবে গণতন্ত্রের পথ ছেড়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিলে দেশের মানুষ তাদের প্রতিরোধ করবে।’
মতিয়া বলেন, দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তি আর বেগম খালেদা জিয়ার শক্তি হলো ষড়যন্ত্র। জনগণের শক্তির কাছে ষড়যন্ত্র পরাজিত হবেই।
যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে, চলবে। কোন অপশক্তি এ বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করা এ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা থেকে সরে যাইনি এবং সরবো না।
মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মন্তব্যের জবাবে মতিয়া বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানীদের মেহমানদারীতে ছিলেন। তাই শহীদের সংখ্যা নিয়ে তার মনে প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়।
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দেশে তার রাজনীতি করার কোন অধিকার থাকতে পারে না।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাকিস্তানী ভাবাদর্শে বিশ্বাসী বেগম খালেদা জিয়াকে সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কাউকে দলের প্রধান করলেই আপনারা শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা পালন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে এবং তা প্রতিহত করার জন্য সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টিসহ দেশের বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ বিচক্ষণ নেতৃত্বে দেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয় এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং ১২ জানুয়ারী সরকার গঠন করে।
তাই আওয়ামী লীগ গত বছর থেকে ৫ জানুয়ারীকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ দিবস উদযাপন করবে বলে ঘোষণা করেছে।
এ উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দুপুর একটা থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা থেকে মিছিল আসতে শুরু করে। বেলা আড়াইটার মধ্যে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইট থেকে গুলিস্তান মোড় ও কাপ্তান বাজার পর্যন্ত এবং পশ্চিমে জিপিও পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মাথায় ফেস্টুন বেধে, পুরান ঢাকার বাহারী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সমাবেশে যোগদান করে।
তাছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগের অধীন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংক এবং কোম্পানীর শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সমাবেশে অংশ গ্রহন করে।