36 C
Bangladesh
Monday, June 5, 2023
Homeখেলামরক্কোর স্বপ্ন ভঙ্গ করে ফাইনালে ফ্রান্স

মরক্কোর স্বপ্ন ভঙ্গ করে ফাইনালে ফ্রান্স

বিশকাপের মত আসরে দুই ফেবারিট দল ফাইনালে খেলবে এমন প্রত্যাশাই করে থাকে ফুটবল অনুরাগীরা। কাতার বিশ^কাপ তাদেরকে হতাশ করেনি। গতকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে উড়তে থাকা মরক্কোকে ২-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন।

ফ্রান্সের  হয়ে গোল দুটি করেছেন থিও হার্নান্দেজ ও রানডাল কোলো মুয়ানি।

রোববার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে হাই ভোল্টেজ ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে টুর্নামেন্টের আরেক ফেবারিট লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার।

প্রথম সেমিফাইনালে মেসির দুর্দান্ত পারফরমেন্সে গতবারের রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সের সামনে এখন সুযোগ ১৯৬২ বিশ^কাপে ব্রাজিলের  সাফল্যের পর টানা দুইবার শিরোপা ধরে রাখার। একইসাথে আর্জেন্টিনার সামনে সুযোগ থাকবে চার বছর আগের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার। রাশিয়া বিশ^কাপে শেষ ষোলতে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছিল আলবি সেলেস্তারা।

এদিকে সেমিফাইনালের পরাজিত দুই দল ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কো শনিবার তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচে একে অপরের মোকাবেলা করবে।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দুটি পরিবর্তন এনে  সেরা একাদশ সাজিয়েছিল  ফ্রান্স । অসুস্থতার কারনে আদ্রিয়ের রাবিয়ত ও ডায়ট উপামেকানো আজকের ম্যাচের মূল দল থেকে ছিটকে গেছেন। মধ্যমাঠে রাবিয়তের স্থানে ইউসুফ ফোফানা খেলেছেন। এ পর্যন্ত ফ্রান্সের পাঁচটি ম্যাটেই রাবিয়ত খেললেও আজকের ম্যাচে বদলী বেঞ্চেও জায়গা হয়নি তার। এদিকে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রাফায়েল ভারানের সাথে উপামেকানোর স্থানে লিভারপুলের ইব্রাহিমা কোনাতে সুযোগ পেয়েছেন। তবে বায়ার্ন মিউনিখের উপামেকানো অন্তত বদলী বেঞ্চে জায়গা পেয়েছেন।

মোনাকো মিডফিল্ডার ফোফানার এটি ফরাসিদের জার্সি গায়ে সপ্তম ও কোনাতের ষষ্ঠ ম্যাচ। এছাড়া দিদিয়ের দেশ্যম একাদশের বাকি খেলোয়াড়দের উপর আস্থা রেখেছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে উজ্জীবিত পারফরমেন্স করা অন্য সবাই আজকের ম্যাচে মূল দলেই খেলছেন। শেষ আটে অলিভার গিরুদের শেষ মুহূর্তের গোলে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

এদিকে এই প্রথমবারের মত আফ্রিকান ও আরব দেশ হিসেবে বিশ^কাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মরক্কো। শেষ আটে পর্তুগালের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ী  ম্যাচটিতে ইনজুরি সমস্যায় খেলতে না পারা দুই ডিফেন্ডার নায়েফ আগুয়ের্ড ও নুসাইর মাজরাওয়ি পুনরায় দলে ফিরেছেন। আগের ম্যাচে ইনজুরিতে পড়া অধিনায়ক রোমেইন সেইস ফিট হয়ে মূল দলেই রয়েছেন। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে আগের ম্যাচের জাওয়াদ এল ইয়ামিক, সেইস ও আশরাফ হাকিমিকে বেছে নিয়েছেন মরক্কান কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুই। তবে মিডফিল্ডার সেলিম আমাল্লাহ ও ফুল-ব্যাক ইয়াহিয়া আতিয়াত-আল্লাহ বদলী বেঞ্চে চলে গেছেন।

ফ্রান্স পরিচিত ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেললেও মরক্কো খেলেছে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে। ৫ মিনিটে ভারানের থ্রু পাস থেকে আঁতোয়ান গ্রীজম্যান হয়ে বল চলে যায় কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে। ডানদিক থেকে গ্রীজম্যানের বাড়ানো পাসে এমবাপ্পে শট নিলেও তার দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ফিরতি বলে থিও হার্নান্দেজ বল জালে জড়ান (১-০)। এর মাধ্যমে এবারের আসরে ছয় ম্যাচ পরে প্রথম গোল হজম করলেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বনু। পাঁচ মিনিট পর মরক্কো ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ তৈরী করেছিল। কিন্তু আজেদিনে উনাহির কার্লিং শট দারুনভাবে রুখে দেন ফরাসি গোলরক্ষক  হুগো লোরিস। ডানদিক থেকে হাকিম জিয়েচের একটি ক্রস বক্সের ভিতর পড়লেও তা ইউসেফ এন-নেসরির কাছে যাবার আগেই ভারানে ক্লিয়ার করেন। ১৯ মিনিটে অধিনায়ক সেইস মাঠত্যাগে বাধ্য হন। ম্যাচের শুরুতেই অবশ্য তার খেলা নিয়ে শঙ্কা ছিল। ৩৬ মিনিটে মাত্র ছয় গজ দুর থেকে এমবাপ্পের শট ক্লিয়ার করেন হাকিমি। প্রথমার্ধের শেষ ভাগে ফ্রান্সকে চেপে ধরে মরক্কো। জিয়েচের কর্ণার থেকে ডিফেন্ডার ইয়ামিকের ওভারহেড কিক লোরিসের ডানদিকের পোস্টে লেগে ফেরত আসে। চার মিনিটের ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে আরো একটি কর্ণায় পায় মরক্কো। আবারো জিয়েচের কর্ণার থেকে লোরিস ঝাপিয়ে পড়ে ফ্রান্সকে রক্ষা করেন। মিনিটখানেক পর সোফিয়ান বুফালকে চ্যালেঞ্জের অপরাধে ফ্রি-কিক পায় মরক্কো। এবারো জিয়েচের ক্রস লাইন থেকে বেরিয়ে এসে রুখে দেন লোরিস।

রেগ্রাগুই তার দলকে নিয়ে অবশ্যই গর্বিত হতে পারেন। ম্যাচের শুরুতেই এক গোলে পিছিয়ে থেকে ইনজুরির কারনে অধিনায়ক রোমেইন সেইসকে হারানোর পরও একবিন্দু গতি হারায়নি দলটি। বিরতির পর রক্ষনভাগে মাজরাওয়ির স্থানে আতিয়াত আল্লাকে নামান রেগ্রাগুই। ফ্রান্সের রক্ষনভাগে ভারানে ও কোনাতে মরক্কোর দুটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জকে নষ্ট করে দেন। ডানদিকে হাকিমির ক্রস থেকে এন-নেসরির শট ভারানে ক্লিয়ার করেন। এরপর মধ্যমাঠে বুফালের বাড়ানো পাস থেকে উনাহির আক্রমন থামিয়ে দেন কোনাতে। ৬০ মিনিটে অলিভার গিরুদ ও এমবাপ্পে যৌথ প্রচেষ্টার একটি আক্রমন অফসাইডের কারনে সফল হয়নি। ৬৫ মিনিটে গিরুদের পরিবর্তে মার্কোস থুরাম মাঠে নামলে এমবাপ্পের উপর পুরো আক্রমনভাগের দায়িত্ব পড়ে। ম্যাচে ফিরে আসার লক্ষ্যে এসময় রেগ্রাগুইও দুটি পরিবর্তন করেন। আক্রমনভাগকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এসময় তিনি দুই ফরোয়ার্ড জাকারিয়া আবুখালাল ও আবদে রাজ্জাক হামাদাল্লাহ। মাঠে নামার দশ মিনিটের মধ্যে হামাদাল্লাহ ফ্রান্সের অর্ধ থেকে বল কেড়ে নিয়ে একাই সুযোগ তৈরী করেন। কিন্তু তার শটটি অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

৭৯ মিনিটে দেশ্যমের সুপার সাব হিসেবে নিজেকে প্রমান করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন রানডাল কোলো মুয়ানি। ওসমানে ডেম্বেলের জায়গায় মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে তিনি দারুন এক গোলে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এমবাপ্পের প্রচেষ্টাকে কোলো মুয়ানি মাত্র ছয় গজ দুর থেকে সফল করেছেন। লেস ব্লুজরা এ পর্যন্ত পুরো আসরে কোন ম্যাচেই গোলবার সুরক্ষিত রাখতে পারেনি। সে কারনেই দেশ্যমের মনে কিছুটা হলেও শঙ্কা ছিল। ইনজুরি টাইমের একেবারে শেষ মুহূর্তে হামাদাল্লাহর একটি শট লাইনের উপর থেকে ক্লিয়ার করেন কুন্ডে। আর এতেই মরক্কোর শেষ স্বপ্নও ভেঙ্গে যায়। পুরো ম্যাচে মেক্সিকান রেফারি সিজার রামোস মাত্র একটি হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। ২৭ মিনিটে হার্নান্দেজকে বাজেভাবে চ্যালেঞ্জ করায় বুফালকে হলুদ কার্ড দিয়ে সতর্ক করা হয়। ম্যাচের ৫১ শতাংশ বল পজিশন ছিল মরক্কোর দখলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্রান্সের কাছেই তাদের বিশ^কাপের স্বপ্নযাত্রা শেষ হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img