বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ লুটের ঘটনায় জড়িত এমন ছয় কর্মকর্তাকে শীঘ্রই চাকুরিচ্যুত করা হবে। অর্থ লুটের ঘটনায় তাদের সহযোগিতা আছে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। এই ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার পূর্বে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হবে দুদককে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এমন কথাই বলেছেন। রিজার্ভের বিষয়ে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। কবে নাগাদ এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঈদের পরে তা প্রকাশ করা হবে।
দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বর্ষীয়ান এ মন্ত্রী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় দুদক মামলা করবে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়ে থাকলে সেটা বাতিল করা হবে, আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব স্টাফ হলে তাকে সাসপেন্ড(বরখাস্ত) করা হবে।
রিজার্ভ লুটের পরে এর রহস্য উদঘাটন ও এর সঙ্গে কারা জড়িত আছে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ফরাসউদ্দিনকে দায়িত্ব দেয় সরকার। দুই দফায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট জমাদেন তিনি। রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে ফরাসউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রিপোর্টটি হজম করতে সরকারকে সময় দিতে হবে। এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা ইচ্ছে করে হোক বা তাদের উদাসীনতা বা দায়িত্বে অবহেলার কারণে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা, উপ-পরিচালক জি এম আবদুল্লাহ ছালেহীন, কর্মকর্তা শেখ রিয়াজউদ্দিন, উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, রফিক আহমেদ মজুমদার ও গভর্নর সচিবালয় বিভাগে কর্মরত মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফলে এই ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামবে দুদক এমন ঈঙ্গিতই দিলেন অর্থমন্ত্রী।
এই ছয় কর্মকর্তা ছাড়াও আরো অনেকের নাম বেরিয়ে আসতে পারে জানা গেছে। তাদের সঙ্গে উর্দ্ধতন কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হবে দুদকের তদন্তে বলে সূত্র জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই কর্মকর্তারাই হয়ত পরবর্তীতে এ ঘটনায় নতুন মোড় দিতে পারে।
অর্থ লুট হওয়াটি দুর্নীতি বিধায় তা দুদক তদন্ত করবে। একইসঙ্গে যেহেতু এটি মুদ্রা-পাচার বিরোধী আইনের আওতায় পরে তাই এরসঙ্গে সরকারের আরো কয়েকটি সংস্থা জড়িত হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে। অভিযুক্তদের সম্পদ ও আয়করের হিসাব নেওয়া হবে।
অপরদিকে এর বাংলাদেশের অর্থ লুটের ঘটনাটি তদন্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলেছে, অর্থ লুটের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত আছে। এমন তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরি করেছে সংঘবদ্ধ দেশি-বিদেশি একটি চক্র। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে, এর মধ্যে ১৯.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শ্রীলংকা থেকে ফেরত আনা গেছে। আর ৮১ মিলিয়ন ডলার রয়েছে ফিলিপাইনে। ফিলিপাইনের প্রচেষ্টায় ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কাছ থেকে কিছু ডলার উদ্ধার করতে পেরেছে দেশটি। কিন্তু ফিলিপাইনের পত্রিকাগুলো বলছে, দ্বিতীয় দফায় আরো ৮৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা চুরি করে পাঠানো হয় ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফেডারেল রিজার্ভের সন্দেহ হলে সেই অর্থের ছাড় আটকে দেয় ফিলিপাইন। পরে সে অর্থ ফেরত নেয় ফেডারেল রিজার্ভ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে, অর্থ ছাড়ে ৩৫টি আদেশ পাঠানো হয়েছিল ফেডারেল রিজার্ভে। কিন্তু তদন্ত দল কম্পিউটারের তথ্য বের করে দেখতে পায় আদেশ গিয়েছিল ৭০টি। এসব আদেশে টাকা স্থানান্তরের নির্দেশ ছিল ১৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিমাণ অর্থ ফেডারেল রিজার্ভে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সে দিন ছিল না।
এ কারণে লেনদেনে সন্দেহ হয় ফেডারেল রিজার্ভের। তাই প্রথম দিকের আদেশগুলো কার্যকর হয়। পরের আদেশের বিষয়ে কনফার্মেশন চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সাড়া না পেয়ে অর্থ ছাড় আটকে দেয় ফেডারেল রিজার্ভ। এখন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আসলে কত টাকা সরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে? প্রশ্নটির উত্তর এখন পর্যন্ত অজানাই রয়ে গেছে।