31 C
Bangladesh
Thursday, June 8, 2023
Homeস্বাস্থ্যসঠিক নিয়মে দাঁতের যত্ন নেবেন যেভাবে

সঠিক নিয়মে দাঁতের যত্ন নেবেন যেভাবে

দাঁতে যখন ব্যথা
হাসপাতাল ও চেম্বারগুলোতে বেশির ভাগ রোগী দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির ব্যথা নিয়ে আসেন। এর প্রধান কারণ দাঁতের ক্ষয়রোগ। এই রোগের চিকিৎসা করা না হলে দাঁতের ব্যথার উপসর্গ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ক্যাভিটি বা দাঁতে গর্ত তৈরি হয়। গর্ত গভীর হয়ে দাঁতের ভেতর পাল্প বা অস্থিমজ্জা স্পর্শ করলে ব্যথা শুরু হয়।

মাড়ির ব্যথা
মুখ ঠিকমতো না ধোয়া এবং ওরাল হাইজিন মেইনটেইন না করার ফলে মাড়িতে ইনফেকশন হয়, মাড়ি ফুলে যায়। এতে পাইরিয়া বা জিনজিবাইটিস রোগ হয়। ডেন্টাল ক্যারিজ থেকে পাল্পাইটিস এবং ফিকশন থেকে জিনজিবাইটিস হয়। এই দুই রোগেই মানুষ বেশি ভোগে। এ ছাড়া দাঁতে অ্যাবসিস, সিস্ট, টিউমার ও অস্টিওমাইরাটিস হতে পারে। মাড়ির রোগের যদি চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তবে দাঁত নড়া শুরু করে এবং এক পর্যায়ে দাঁত পড়ে যায়।

দাঁত ব্রাশের নিয়ম
দাঁত ব্রাশ হচ্ছে ওরাল হাইজিন মেইনটেইনের প্রাথমিক নিয়ম। ভালোভাবে দাঁত ব্রাশের নিয়ম হচ্ছে ওপরের মাড়ি ওপর থেকে নিচের দিকে এবং নিচের মাড়ি নিচ থেকে ওপরের দিকে ব্রাশ করা। ভেতরের দিকের নিয়মও তাই। সব শেষে দাঁতের উপরিভাগ অর্থাৎ যে সারফেস দিয়ে আমরা কামড় দিই সেটি ঘষতে হবে। ব্রাশিংয়ের সঠিক টাইম দুই থেকে তিন মিনিট। ব্রাশ কেনার সময় সফট ফাইবার দেখে বাছাই করতে হবে, যাতে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ফাইবার নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ব্রাশটি ব্যবহার করা যাবে।

কখন এবং কতবার ব্রাশ?
রাতে শোয়ার আগে এবং সকালে নাশতার পর—এই হিসেবে দিনে কমপক্ষে দুইবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। একান্তই একবার দাঁত ব্রাশ করলে সেটা অবশ্যই রাতে শোয়ার আগে। রাতে ব্রাশ করলে সারা দিন খাওয়ার পর মুখের ময়লা, দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রতিদিন ব্রাশ না করলে এগুলো পরের দিন শক্ত হয়ে দাঁতের গায়ে লেগে যায়। সেখান থেকে এসিড বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্যারিজ তৈরি, দন্তক্ষয়সহ নানা রোগের সূচনা ঘটায়। নাশতার আগে দাঁত ব্রাশ করে কোনো লাভ নেই। খাওয়ার পর ব্রাশ করলে লেগে থাকা খাবার কণা ব্রাশের ফলে পরিষ্কার হয়ে যায়।

ব্যবহার করুন ফ্লস
ব্রাশ অনেক সময় দাঁতের সব অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারে না। বিশেষ করে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী অংশ যেখানে ব্রাশের ফাইবার ঢুকতে পারে না। ফ্লস করলে এই ময়লা বের করা যায়। ফ্লস এক ধরনের সুতা। এটা মাড়ির কোনো ক্ষতি করে না। অনেকেই খিলাল ব্যবহার করেন। এতে অনেক সময় মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আধুনিক পদ্ধতি হচ্ছে ফ্লসিং।

ব্যবহার করুন মাউথওয়াশ 
দাঁত ব্রাশ ও ফ্লসিংয়ের পরও ১০ শতাংশ জায়গা থাকে, যেখানকার ময়লা পরিষ্কার হয় না। এসব জায়গায় অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ ঘটে। সে জন্য মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। এতে ওই জায়গাগুলো পরিষ্কার হয়। পাশাপাশি মুখের ফ্লেভার ঠিক থাকে। মাউথওয়াশে দন্তক্ষয় প্রতিরোধী উপাদান থাকায় ক্যারিজের শঙ্কা কম থাকে। ফলে দন্তক্ষয়ের ভয়ও কমে যায়।

সুরক্ষা দেয় মাউথওয়াশ
পবিডন আয়োডিনযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। পবিডন আয়োডিনযুক্ত মাউথওয়াশ দিয়ে গড়গড়া বা কুলকুচি করলে করোনা সংক্রমণের শঙ্কাও কমে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পবিডন আয়োডিনযুক্ত মাউথওয়াশ দিয়ে গড়গড়া করলে গলায় থাকা করোনাভাইরাসের বাইরের স্তর ভেঙে যায়। ফলে ফুসফুসে যাওয়ার সুযোগ থাকে না, পাকস্থলীতে চলে যায় এবং ধ্বংস হয়ে যায়।

কেমন টুথপেস্ট চাই?
আপনি যে টুথপেস্টই ব্যবহার করুন না কেন, দেখে নিন সেটা ফ্লোরাইডযুক্ত কি না। ব্রাশ করার বৈজ্ঞানিক নিয়ম চালু হয়েছে মূলত মেছওয়াক থেকে। পরবর্তী সময়ে এটাকে আরো আরামদায়ক করার জন্য পেস্টের আবিষ্কার হয়। দাঁতের ক্ষয় রোধ করার জন্য পরবর্তী সময়ে এর মধ্যে ফ্লুরাইড যোগ করা হয়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একই ব্র্যান্ডের টুথপেস্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পাঁচ-ছয়টি দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড বাছাই করা যেতে পারে। এরপর ক্রমান্বয়ে একেক ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ভালো ফল মেলে।

স্কেলিং কতটা জরুরি?
স্কেলিং হচ্ছে দাঁত পরিষ্কার করা। যেমন—সাবান দিয়ে শরীর পরিষ্কার করা, শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করা ইত্যাদি। মানুষের মুখের ভেতরও খাবার থেকে নানা ময়লা ও পাথর তৈরি হয়। ডাক্তারিবিদ্যায় একে বলা হয় ক্যালকুলাস। এই ক্যালকুলাস পরিষ্কার করার জন্য স্কেলিং করতে হয়। সাধারণত একবার স্কেলিং করলেই হয়। এরপর বছরে একবার চেক করে দেখতে হয় স্কেলিং লাগবে কি না।

নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ করান
দাঁত ব্রাশ, ফ্লস, মাউথওয়াশ হচ্ছে নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়ার বিষয়। এর মধ্যে প্রতি ছয় মাসে একবার দাঁতের চেকআপ করা বিধিসম্মত। যদিও উন্নত দেশগুলোতে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারগুলো জনগণকে ছয় মাস অন্তর চিঠি দিয়ে দাঁতের চেকআপ করতে আহ্বান জানায়। আমাদের দেশের জনগণের যেমন সচেতনতার অভাব আছে, তেমনি সে রকম স্বাস্থ্যব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। তবে এটা উপদেশ হিসেবে বলা যেতে পারে, বছরে দুইবার একজন ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁত ও মুখের চেকআপ করে নেওয়া ভালো।

শিশুর দাঁতের যত্নে করণীয়
শিশুদের ব্যবহারের জন্য আলাদা ব্রাশ ও পেস্ট পাওয়া যায় বাজারে। শিশুকে এগুলো ব্যবহার করতে দিন। শিশুরা ব্রাশ ধরতে শেখার আগেও তাদের দাঁতের যত্ন নেওয়া জরুরি। নইলে দুধদাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়; খেতে পারে না। শিশুর ছয় মাস পরই দাঁত উঠতে শুরু করে এবং দুই বছরের মধ্যে ২০টির মতো দুধদাঁত উঠে যায়। দুই বছর হওয়ার পর শিশুকে কোলে বসিয়ে ব্রাশ করা শিখিয়ে দিন। কেননা শিশুরা বেশ অনুকরণপ্রিয়। দুই দিন দেখিয়ে দিলে পরে নিজেরাই ব্রাশ করা শুরু করে। শিশুটি যদি ব্রাশ করতে না দেয় তাহলে পরিষ্কার কাপড় অথবা তুলা ভিজিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিন।

দাঁতের যত্নে বর্জনীয়
পান, চুন, সুপারি, জর্দা, খয়ের ইত্যাদি দাঁতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান ও মদ্যপানের ফলেও দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিগারেটের নিকোটিন, চায়ের ট্যানিন ও কফির ক্যাফেইন দাঁতের গায়ে লেগে ময়লা তৈরি করে। এগুলো থেকেও দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এসব বর্জন করা শ্রেয়।

কখন দাঁতের চিকিৎসা?
যখনই দাঁতে কোনো অসুবিধা অনুভব হবে তখনই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। অনেক সময় চিকিৎসকের উপদেশ মানলেই দাঁতের অসুখ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। চিকিৎসা নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে চিকিৎসক বিডিএস সনদধারী কি না। কারণ সারা দেশে লক্ষাধিক হাতুড়ে ডাক্তার বা কোয়াক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যাঁদের অপচিকিৎসার কারণে টিউমার থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার বড় বড় ক্যান্সার হাসপাতালে শত শত রোগী মুখের ক্যান্সার নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, বিডিএস, নয়তো ডেন্টিস্ট নয়। টাকা বাঁচাতে গিয়ে কোনো হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে জীবননাশের মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়।

কিছু ভুল ধারণা

  • অনেকেই মনে করেন কোনো কারণে দাঁত ফেলে দিলে চোখের ক্ষতি হয়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা বা কুসংস্কার। কেননা যে দাঁতটি তুলে ফেলা হয় সেটি হয় সংক্রমিত অথবা অন্য কোনো অসুবিধা ছিল। সেটি না তুলে ফেললে বরং অন্য অনেক রোগ হতে পারে।
  • অনেকেই মনে করেন, ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেললে সুন্দর দাঁত ওঠে। এটা পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার। ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে আক্কেল দাঁত ওঠে। সবার পড়ে ওঠার কারণে এটি পর্যাপ্ত জায়গা পায় না। এ কারণে অনেক সময় আঁকাবাঁকা হয়ে ওঠে। এ সময় চোখে, মুখে ও চোয়ালে ব্যথা শুরু হয়। হাঁ করতেও কষ্ট হয়। এসব কারণে আক্কেল দাঁত ফেলে দিতে হয়। অনেকেই মনে করেন, এতে শরীরের ক্ষতি হয় এবং বুদ্ধি কমে যায়। এটাও কুসংস্কার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Most Popular

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img