তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সম্প্রচার মাধ্যম আগামী দিনগুলোতে মানুষকে শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি দেবার লক্ষ্যে কাজ করবে।
তিনি মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চন শহরে ওকউড প্রিমিয়ার হোটেলে সেদেশের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মন্ত্রী চি ইয়ানগী এর সভাপতিত্বে ও এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ব্রডকাস্ট ডেভলপমেন্ট (এআইবিডি)’র উদ্যোগে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ সভায় বক্তৃতা করছিলেন।
সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভবিষ্যৎ উন্নয়নে সম্প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা ও অবদান’। এতে কম্বোডিয়া, লাও, সামোয়া, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের সংশ্লিট মন্ত্রীবর্গ ও নেপালের তথ্য সচিব অংশগ্রহণ করেন ।
বাংলাদেশের নীতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, অতীতের স্বৈরশাসনের জঞ্জালমুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে যাত্রায় শেখ হাসিনার সরকার বেসরকারি টিভি, এফএম ও কমিউনিটি বেতার চালু করে সম্প্রচার মাধ্যমের এক অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং গণমাধ্যম ক্রমশই আমাদের সকলকে একটি কাঁচের ঘরের ভেতরে নিয়ে আসছে। এ ঘরে থাকা শিশু-নারী-বৃদ্ধ, রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অগ্রহণযোগ্য উপাদান, সাইবার অপরাধ ও জঙ্গিবাদ। এর প্রতিকারে আইনগত ও কারিগরি উভয়বিধ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী সম্মেলনে সাড়া জাগানো তার ১১ মিনিটের বক্তৃতায় আরো বলেন, ‘সম্প্রচার মাধ্যমের কাজ হলো তথ্য, বিনোদন ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলা। আত্মিক ও নান্দনিক সমৃদ্ধি না ঘটলে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনো টেকসই হতে পারেনা। আর তাই ২০১৫ পরবর্তী জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ১৬ নম্বরে গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয় ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।’
এ সম্মেলন ও ২৪ থেকে ২৬ মে এশিয়া মিডিয়া সামিটের ১৩তম আসরে তথ্যমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মহাপরিচালকদ্বয়, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যোগ দিচ্ছেন। সম্মেলনের আগের দিন বিকেলে তথ্যমন্ত্রী কোরিয়ার ইঞ্চনে পৌঁছান ও ২৬ মে আবার ঢাকার উদ্দেশে কোরিয়া ত্যাগ করবেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিশ্ব তথ্য, যোগাযোগ ও সম্প্রচার শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি ওকউড প্রিমিয়ার হোটেলেই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারোটায় কোরিয়া রিপাবলিকের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মন্ত্রী চি ইয়ানগী এর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন
বিশ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে দু’মন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে তথ্য, সংবাদ ও অনুষ্ঠান আদান প্রদানে দু’দেশের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ও সংবাদ পরিবেশকদের মধ্যে একটি বহুমুখী চুক্তির খসড়া প্রণয়নে একমত হন।
তথ্যমন্ত্রী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বাংলাদেশ থেকে আমদানী বৃদ্ধির জন্য কোরিয়ার সহযোগিতাবৃদ্ধির আহ্বান জানান । তিনি এসময় কৃষি ও তথ্য প্রযুক্তিখাতে কোরীয় উন্নয়ন সংস্থা কোইকার প্রশিক্ষণ ও তাদের সহায়তায় নির্মাণাধীন নার্সিং একাডেমির জন্য কোরীয় মন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তথ্যমন্ত্রী ইনু এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কোরীয় রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান ।
কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জুলফিকুর রহমান, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এসএম হারুন-অর-রশীদ, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক একেএম নেছারউদ্দিন ভূঞা ও সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মীর আকরাম উদ্দীন আহম্মদ এসময় মন্ত্রীর সাথে যোগ দেন।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এর আগে মঙ্গলবার সকাল ন’টায় দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চন শহরে একই ওকউড প্রিমিয়ার হোটেলে এশিয়া মিডিয়া সামিটের ১৩তম আসরে অতিথি বক্তা হিসেবে গণমাধ্যমের উপাদান ও সমসাময়িক বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে সম্প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।