প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকট থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আবারো অনুরোধ করছি কোন খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান, সারা বিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি সকলের প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রনালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য-এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যা আমাদের দেশের মানুষ কেবল নয়, সারাবিশ্বের মানুষেরই এটা একান্তভাবে প্রয়োজন।’
খাদ্যের চাহিদা কোনদিন কমে না, বরং বাড়ে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই আমি যত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি আর যত বেশি খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারি ততই আমাদের মঙ্গল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং যেটা আমাদের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখতে পারে।’
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বলবো সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, খাদ্যের অপচয় বন্ধ করা এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য সংরক্ষণ এবং পুর্নব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া সারাদেশে গড়ে তোলা ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে ওঠে সেই বিষয়টাতেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’
‘নিজের খাবার নিজেরা উৎপাদন করার চেষ্টা করবেন, যাতে পরিবেশের ওপর চাপ কমে, বাজারের ওপর চাপ কমে। সকলে মিলে আমরা কাজ করলে অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশের ওপর কোন রকম আঘাত আসবে না, এটা আমার দৃঢ বিশ্বাস’, যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
পতিত জমি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আসবে না, বরং বিশ্ব খাদ্যসংকটে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশকে খাদ্য সহায়তা করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এজন্য তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কোন দুর্যোগে আমাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আমরা যেন জমানো খাদ্যটা ভালো ভাবে ব্যবহার করতে পারি, সেদিকে আমাদের সকলকে নজর দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে সমস্ত পণ্য এখনো আমাদের আমদানী করতে হয়, যেমন- ভোজ্য তেল অথবা ভূট্টা, গম ইত্যাদি উৎপাদনেও তিনি মনযোগী হওয়ার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে গুরুত্বারোপ করে উদাহারণ দেন ইতোমধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনের মাধ্যমে সে সংকটকে আমরা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের যে মাটি ও মানুষের শক্তি রয়েছে তা নিয়ে আমাদের কৃষকদের একটু সহায়তা দিলেই আমরা ভোজ্যতেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো। আর তাঁর সরকার মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতির পিতার গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষির ওপর গুরুত্বারোপ করে দেয়া দেয়া এক ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার মাটির সঙ্গে, আমার মানুষের সঙ্গে, আমার কালচারের সঙ্গে, আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে, আমার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করেই আমার ইকোনমিক সিস্টেম গড়তে হবে।’
‘আমিও এটা বিশ্বাস করি যে, আমাদের মাটি ও মানুষ, আমাদের প্রকৃতির সাথে মিল রেখেই আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আমরা আমাদেও দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের দেশকে আরো উন্নত করবো এটাই আমাদের লক্ষ্য,’বলেন তিনি।