স্বামী গোবিন্দ বরের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন গবেষক ও অধিকারকর্মী সাধনা মহল। সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি করেন তিনি।
‘অধিকার কর্মী সাধনা মহল: পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিচারিক নারী-নির্যাতনের শিকার’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে সাধনা মহল স্বামী কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের বিবরণ দেন। স্বামীর মামলা-হামলা এবং প্রশাসন ও আইন আদালতকে অপব্যবহার করে নির্যাতন-নিপীড়নেরও বর্ণনা তুলে ধরেন সাধনা মহল।
গোবিন্দ বরের মিথ্যা মামলা ও তার প্রেক্ষিতে দুই দফা গ্রেপ্তার, পুলিশি নির্যাতন, ভাড়া করা গুণ্ডা, বাড়ি থেকে উৎখাত করা, জেলহাজতে রেখে নির্যাতন করা, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলা, আর্থিক ক্ষতি করা, সামাজিকভাবে সম্মানহানি, অশ্লীল ভিডিও তৈরি ও প্রচার, কুৎসা রটানো ও আট মাস পলাতক মানুষের জীবনযাপনে বাধ্য করার কথা উল্লেখ করে সাধনা মহল প্রশ্ন করেন, ‘এসব কিছু গোবিন্দ ও তার সহযোগীরা করেছে কেন?’
তিনি বলেন, কারণ একটিই। আমি যেন তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে ব্যর্থ হই। আমি নিজে যেন নিজের জীবন নিয়ে আতঙ্ক ও ব্যস্ততায় কাটাই। তাকে যেন বিচারের মুখোমুখি না দা্ঁড়াতে হয়। এটি আমাদের সংবিধান ও স্বাধীনতার জন্য অত্যন্ত ভীতিকর এবং উদ্বেগজনক।
তিনি আরও বলেন, একদিকে আমার বিরুদ্ধে করা চুরি ও যৌতুকের দুই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে, আমি আদালতে সশরীরে উপস্থিত না থাকতে পারলেও গোবিন্দ নিজে দুটি মামলায় অভিযুক্ত আসামি। আমি আাইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি পলাতক জীবনের অবসান ও আপনাদের সহযোগিতা চাই। সাংবাদিকদের জন্যও এটি লজ্জার। কারণ তারা সমাজের দর্পণ ও দিন বদলের সেনানি বলে স্বীকৃত। অথচ, কোনো যাচাইবাছাই বা খোঁজ না নিয়ে কেবলমাত্র প্রভাব খাটিয়ে গোবিন্দ তাদের সহযোগিতায় ২০টি পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে, অনলাইন পোর্টালে, ইউটিউবে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল করে। তারা আমাকে একজন বিবাহ ব্যবসায়ী, অর্থলোভী, দেহব্যবসায়ী, মানব পাচারকারীর মতো ক্ষমার অযোগ্য মিথ্যা প্রচার করেছে। যার নেতৃত্বে ছিল দৈনিক কালবেলা। যদিও দৈনিক কালবেলা পরবর্তীতে তাদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ভিডিও নাগরিকদের চাপে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু এখনও কিছু অবৈধ এবং অখ্যাত অনলাইন প্রচারমাধ্যম যারা আসলে গোবিন্দ বরের মুখমাত্র ও মদতদাতা হিসাবে এখনও মিথ্যাচার, চরিত্র হনন চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাধনা মহল বলেন, গত ১৮ মে থেকে ৫ জুন ২০২৩ পর্যন্ত বিদেশে আমার দুই সপ্তাহের অনুপস্থিতির সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোবিন্দের বন্ধু মুনিয়া এবং তার স্বামী সাইফুল্লাহ এবং মনির (গুলশান থানার একজন সোর্স) সাথে নিয়ে পরিকল্পনা করেছিল আমার বিরুদ্ধে চুরি ও চাঁদাবাজির মামলা দেওয়ার। এমনকি তারা আমাকে জোরপূর্বক অপহরণ করার এবং আদালতের বাইরে নিষ্পত্তিতে রাজি না হলে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করার পরিকল্পনা করেছিল (ভিডিও ফুটেজ রয়েছে)। আমি তার স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও স্বামীর নামে বাসা ভাড়া কনট্রাক্ট থাকার অজুহাতে আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। এমনকি কয়েকবার গুলশান পুলিশও আমার বাসায় আসে। তারা আমাকে ডিভোর্সের জন্য বাড়ি ছাড়ার জন্য চাপ দেয়। ভাড়াকরা গুণ্ডা দিয়ে আমাকে মোটরসাইকেলে অনুসরণ করায়। মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে। আজ অবধি আমি মোবাইল সিম ব্যবহার করতে পারি না। আমার মৌলিক অধিকার আজ ভুলুণ্ঠিত।
তিনি বলেন, আমার অনুপস্থিতে বাড়ির সকল জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পরে ২০২৩ সালে জুলাই মাসে উল্টো আমার বিরুদ্ধেই গুলশান থানায় দণ্ডবিধির ৩৮০ ধারায় একটি চুরির মামলা দায়ের করে গোবিন্দ। তবে উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগের একটি আদেশে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিবাহিত অবস্থায় স্বামীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে চুরির মামলা গ্রহণযোগ্য নয়। তার অবৈধ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে, গোবিন্দ এই নাটক সাজায় গুলশান থানার পুলিশের সহায়তায়। যার ফলে পুলিশ আমাকে গুলশানের রাস্তা থেকে গ্রেপ্তার করে। তার ব্যবহৃত কালো হাভাল জিপে বলপ্রয়োগ করে আটক করে নিয়ে যায় থানায়। চুরির মামলা বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও গোবিন্দ নিজেই গুলশান থানায় অবস্থানরত পুলিশ কর্মকর্তাদের গভীর রাত পর্যন্ত নির্দেশনা দেয় নির্যাতনের জন্য। সারা রাত অমানবিক আচরণ, অকথ্য ভাষার ব্যবহার, ফোন করতে না দেওয়া, পানি খেতে না দেওয়া, বাথরুম ব্যবহার করতে না দেওয়া, অন্য পাশের সেলের পুরুষ বন্দী আমার সেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকিসহ সারা রাত ট্রমাটাইজ করে নির্যাতন করায়।
সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু দাবি উত্থাপন করেন সাধনা মহল। সেগুলো হলো-
১. অবিলম্বে সাধনা মহলের নামে করা মিথ্যা-বানোয়াট মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে এবং মৌলিক অধিকার স্বীকৃত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে হবে ।
২. মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করে চাতুর্যের বেআইনি মামলা প্রদান এবং প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, বিশেষত: গুলশান থানা ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা প্রদান বন্ধ করতে হবে।
৩. তার বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির চর্চার ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইনে গোবিন্দর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. এডিবি সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে পক্ষপাতহীন অবস্হান নেবে। একজন অভিযুক্ত নারী নির্যাতনকারীর জন্য দ্রুত এডিবি কঠোর অবস্থান নেবে।
৫. এডিবির কৌশলগত পদ-পদবী ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে গোবিন্দ বর প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যা দেশের বিচারিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছে। এর প্রতিকার চাই।