এখানে এখন আমরা কেউ নিরাপদে নেই। যেখানেই ফরেন পাইতেছে, সেখানেই মারতেছে। এখানে পুলিশ আছে, কিন্তু তারা আমাদের কাউকে সাহায্য করছে না’ শনিবার বিকেলে এ কথাগুলো বলেন কিরগিস্তানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী সালমান ফারসী সিয়াম।
তিনি জানান, কিরগিস্তানের স্থানীয়রা বাংলাদেশী, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও মিশরীয়সহ সকল বিদেশী শিক্ষাথীদের ওপর শুক্রবার রাতে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বিদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন ও অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে শুনতে পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি। এসব হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়েছে।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমানে কিরগিস্তানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ প্রায় ১০টি দেশের ১৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী আছে। তবে এর মাঝে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২০০ জনের বেশি। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের এক তৃতীয়াংশ, মানে আনুমানিক ৩০০ জন দেশটির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বাকি প্রায় সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।
সিয়াম বলেন, ‘আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে নিরাপদে আছি। কিন্তু যারা প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করছে, তারা নিরাপদে নাই। ‘গতকাল রাত ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত হামলার ঘটনাটি ঘটে। তারপর রাতভর কিরগিস্তানের রাজধানী বিশকেককের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে ঢুকে স্থানীয়রা আক্রমণ করে। তারা প্রাইভেট হোস্টেলগুলোতে ঢুকে ছেলে-মেয়ে কিছু ভেদাভেদ না করে সবার গায়ে হাত তুলেছে। এমনও শুনতেছি যে এখন পর্যন্ত অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মাঝে বাংলাদেশী আছে কি না, জানি না। আর ছয় জনের মতো মারা গেছে, কোন কোন দেশের তা জানি না এখনো।
তিনি আরো বলেন, তবে ‘নিহতদের একজনের মুখমণ্ডল বাংলাদেশীর মতো বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা কনফিউজড।’ যে হোস্টেলের পরিবর্তে যারা বাসায় থাকছেন, তারা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। প্রশাসনের সামনেই এই মারধরের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু ‘প্রশাসন এখানে নীরব’। কিরগিস্তানে কোনো বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় শিক্ষার্থীরা উজবেকিস্তানে থাকা বাংলাদেশী দূতাবাসে যোগাযোগ করেছে। তারা আশ্বাস দিলেও ‘এখন পর্যন্ত ফলস্বরূপ কিছু পাইনি’ বলে জানান তারা।
কিরগিস্তানে অধ্যয়নরত একাধিক দেশের শিক্ষার্থীরা বলেছে, আমরা নিশ্চিত নই যে কী ঘটেছে। তবে আমরা ‘শুনেছেন’ যে মিশরের কিছু নাগরিকদের সাথে কিরগিস্তানের স্থানীয়দের সাথে ঝামেলা তৈরি হয়েছে এবং তারপরই এই অবস্থা।
উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের মতো আমরাও একই বিষয় শুনেছি।’ মূলত, মিশরীয়দের সাথে স্থানীয়দের সাথে গণ্ডগোল হয় গত ১৩ মে এবং সেই ঘটনার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে স্থানীয়রা মিশরীয়দের ওপর আক্রমণ করে।
ইসলাম বলেন, ‘এটি (১৩ তারিখের ঘটনা) যেহেতু ফেইসবুকের মাধ্যমে পোস্ট-টোস্টও হয়, তাই স্থানীয়দের ভেতর একপ্রকার উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই উত্তেজনার ফলশ্রুতিতেই তারা গতকাল রাতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে। বিশেষ করে যারা ডরমিটরিতে আছেন, তাদের ওপর।’ এই ঘটনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, কিন্তু তাদের মাঝে ‘বাংলাদেশী কেউ আছে, এরকম কিছু শোনা যায়নি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।