আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তেও পালাবদল হতে যাচ্ছে। গত ১০ দিনেই সাবেক ৫৬ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর বিপরীতে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ হতে যাচ্ছে। নতুন করে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকা আরও অন্তত দেড় শ সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তার দুর্নীতির ফাইল খুলতে যাচ্ছে কমিশন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই ছাড়া শুধু অভিযোগর ভিত্তিতে দুদক অন্তত সাবেক ৫৬ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদার ১৮ জন, প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদার ১৪ জন ও সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন ২৪ জন।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এম সরোয়ার হোসেন নামের একজন আইনজীবী দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করেন; যেখানে সাবেক ১৬ জন মন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদার, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদার এবং ১২ জন সংসদ সদস্যের দুর্নীতির অনুসন্ধানের কথা জানান। এর দুদিন পরই যাচাই-বাছাই ছাড়া উল্লেখিত ৪১ জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
এদিকে দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, কমিশন দুর্নীতির তদন্তে তালিকা ধরে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় অন্তত দেড় শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সেই সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ ও সুবিধাভোগী আমলা, পুলিশ সদস্যদের আর্থিক অনিয়ম অনুসন্ধানে কাজ করবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সরকারের চাপে বন্দী অনেক ফাইলের লাল ফিতাও খোলা হচ্ছে বলে জানায় সূত্রটি।
সূত্র জানিয়েছে, এই ‘দেড় শর’ তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের নাম রয়েছে। সূত্রটি জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের চাপে বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ হচ্ছে। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আসাদুল হাবিব দুলু, বরকত উল্লাহ বুলুর মতো নেতাদের দুর্নীতির নথিতে হয়রানির কিছু আছে কি না, সেসব নিয়েও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক মইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দুদক সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে। বাতাস দেখে চলা যাদের নীতি। কোনো একটি সরকার আসতে পারে, সেটা বুঝতে পেরে তাদের হয়ে কাজ করা। কোনো দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে হলে কিছু ম্যাটেরিয়াল ও মেরিট থাকতে হয়।
আমরা দেখেছি, এরা ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া সেটা আবার প্রত্যাহার করেছে; যেটার বিরুদ্ধে ড. ইউনূস সাহেব নিজেই প্রতিবাদ করেছেন। আবার একজন বিএনপির নেতার মামলা তারা প্রত্যাহার করেছে। কী কারণে প্রত্যাহার করবে, সেটার ব্যাখ্যা থাকতে হবে।’