বিগত কয়েক বছরে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশের আবহাওয়ারও পরিবর্তন ঘটছে। শীতকালে প্রচন্ড শীত আর গরমকালে প্রচন্ড গরম। এ বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বর্তমানে প্রচন্ড গরম পড়ছে। বৈদ্যুতিক সমস্যা যেমন চরমে তেমনি প্রচন্ড গরমে মানুষের হাপিত্যেশ অবস্থা। হাঁসফাঁস গরমে ঘেমে নেয়ে নাকাল সাধারণ মানুষ। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় অস্বস্তি বাড়ছে বহুগুণ। আট থেকে আশি - সবারই নাভিশ্বাস।
দিনে-রাতে সমান গরম। এ পরিস্থিতিতে ঘরের ভেতরেও টেকা দায়। ফ্যানের বাতাসেও প্রাণ জুড়ায় না। এমনকি সূর্যাস্তের পরও শান্ত হয় না প্রাণ-প্রকৃতি। প্রকৃতির রুদ্ররূপে দুঃসহ জীবনযাপন করছে মানুষ। সব মিলে ওষ্ঠাগত প্রাণ।
প্রচন্ড এ গরমে শরীরে পানিশূন্যতা, হিট ক্রাম্প, অবসাদ, হিটস্ট্রোক, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। গরমে ঘামের মাধ্যমে আমাদের ত্বকের মাধ্যমে প্রচুর লবণ ও পানি হারায়। এই পানির ঘাটতি পূরণ না করলে পানিশূন্যতা হতে পারে। এর লক্ষণ হিসেবে মাথা ঝিমঝিম করে, ক্লান্তি লাগে, মেজাজ খারাপ হয়, প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যায়।
প্রন্ড এ গরমে সুস্থ থাকতে দৈন্দন্দিন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকতে পারেন আপনিও। খাদ্য তালিকায় বেশি বেশী পানিযুক্ত সবজি (পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া,পটল, টমেটো, শসা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা) রাখতে পারেন এবং পাশাপাশি সবুজ শাকও রাখতে পারেন। এছাড়া গ্রীষ্মকালের মৌসুমী ফলগুলো অধিক পরিমান পানিযুক্ত হয়, তাই এ ক্ষেত্রে মৌসুমি বেশী পরিমান মৌসুমী ফল যেমন আম, জাম, কাঠাল, আনারস, লিচু, তরমুজ, বাঙী, জামরুল, বাতাবী লেবু, কমলা, মালটা, নাশপাতি, আপেল,জাম,লিচু,আম,কাঁঠাল,আনারস,জামরুল, কাগজীলেবু সহ অন্যান্য ফল খেতে পারেন। এতে যেমন করে আপনার পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত হবে তেমনি পানির ঘাটতিও পূরণ হবে।
প্রচন্ড এ দাবদাহের মৌসুমে সহজেই পানিশূন্যতা ও লবণশূন্যতা হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ঝুঁকি একটু বেশি। তাই এ ঝুকি এড়াতে পরিবারের সকল বয়সী মানুষ কিছু তরল পানীয় পান করতে পারেন। লেবু-পানি, ডাবের পানি, কাঁচা আমের শরবত, পুদিনা পাতার শরবত, টকদইয়ের লাচ্চি, বোরহানি, জিরা পানি, বেলের শরবত পান করার তালিকায় রাখতে পারেন। তবে অনেক বরফ মিশিয়ে বা খুব ঠান্ডা পানীয় পান করবেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা ঠান্ডার সঙ্গে স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে পান করুন। এতে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমবে। ডায়াবেটিস ও স্থূল রোগীরা চিনি মেশাবেন না। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণ একটু কম দেবেন। আর কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে।
গরমে যেসব খাবার পরিহার করতে পারেন:
বাইরের খোলা জায়গার পানি, শরবত, আখের রস খাওয়া পরিহার করা। এগুলো গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, আমাশয় হয়। এতে আপনার আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। এছাড়া খাবারে অতিরিক্ত মসলা ও মসলাজাতীয় উপকরণ শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো পরিহার করাই ভালো। অনেক কার্বনেটেড বেভারেজ আমরা গরমের সময় প্রচুর খেয়ে থাকি, যা ঠিক না। এই পানীয়গুলো শরীরকে সাময়িক চাঙা করলেও এর কোনো পুষ্টিগুণ নেই, বরং শরীরকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঝাল, বাইরের খাবার, ভাজাপোড়া, চা-কফি এ সময় যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন।
গরমে পোশাক ও পোশাকের নির্বাচন অত্যন্ত জরুরী বিষয়। সাদা রঙের পোশাক গরমে সবচেয়ে আরামদায়ক। তবে ফ্যাশনসচেতন মানুষের জন্য পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে মানানসই রং বেছে নেওয়া ভালো। কিন্তু কালো রং যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। তা ছাড়া সাদা কিংবা যেকোনো ধরনের হালকা রঙের পোশাক পরলেই গরমে কিছুটা হলেও আরাম পাবেন। এসব পোশাক আরামের পাশাপাশি চোখকে দেয় প্রশান্তি। হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, হালকা নীল, বাদামি, আকাশি, হালকা হলুদ, ধূসরসহ হালকা রঙের যেকোনো পোশাক এই গরমে প্রাধান্য দিতে পারেন।
যারা নিয়মিত হাঁটেন, তারা শুধু সময় পরিবর্তন করলেই চলবে। যেমন সকালে না হেঁটে বিকাল/সন্ধ্যার পর হাঁটা বেশি আরামদায়ক। গরমে খুব বেশি হাঁটা, ব্যায়াম, অত্যাধিক পরিশ্রম, অত্যাধিক খাদ্য গ্রহণ পরিহার করুন।