জলবায়ু অর্থায়নে বাংলাদেশ ১ ডলার অনুদানের বিপরীতে ২.৭ ডলার ঋণ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু জলবায়ু ঋণ প্রায় ৮০ ডলার, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর গড়ের তিনগুণেরও বেশি। বহুপাক্ষিক অর্থায়নেও এ ঋণ এলডিসি গড়ের প্রায় পাঁচগুণ। এ ঋণ-নির্ভর সহায়তা কার্যত দেশের জলবায়ু নীতি ও রাজস্ব নীতিকে বিপন্ন করছে।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এক মতবিনিময়সভায় এসব কথা বলেন তারা। সভায় জানানো হয়, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ বিশ্বের ৫৫টি স্বল্পোন্নত দেশের জলবায়ু ঋণ দায় সূচক তৈরি করেছে। জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক বৈঠকে এ সূচকের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশ ঋণ দায়গ্রস্ততার বিশদ বিবরণ দিতে পারবে। বাংলাদেশি এ প্রতিষ্ঠানের তৈরি সূচক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ুর দায়বদ্ধতার দরকষাকষিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
মতবিনিময়সভায় চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, বৈশ্বি উষ্ণতা বৃদ্ধিতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দায় মাত্র ৩.৩ ভাগ কিন্তু তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া শতকরা ৭০ ভাগই পড়ে এ দেশগুলোর ওপর। জলবায়ু ফান্ডের যে অর্থ পাওয়া যায় তার ৯৫ ভাগই ঋণ, মাত্র ৫ ভাগ অনুদান। অর্থাৎ স্বল্পোন্নত দেশগুলো ঋণে জর্জরিত হয়ে উন্নত দেশ সৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার দায় পরিশোধ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ৭ বিলিয়ন ডলার গচ্চা দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বায়ু দূষণের জন্য গড় আয়ু ৭ বছর কমে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশকে জলবায়ুবিষয়ক বিতর্কে প্রাকৃতিক সুরক্ষার কথা নিয়ে আসতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন এবং ন্যূনতম পানির প্রয়োজনের কথা বলতে হবে। এগুলো কিছুতেই দর-কষাকষির বিষয় নয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে ঋণ মওকুফ পেতে হবে।
এ বিষয়ে এখন থেকে কাজ শুরু করা দরকার। বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য বহুমাত্রিক ব্যাংকের আর্থ-সলিডারিটি ফান্ড তৈরি করতে হবে। দূষণের জন্য কার্বন ট্যাক্স ধার্য করতে হবে। জলবায়ুর জন্য আরো ফান্ডের উৎস খুঁজে বের করতে হবে।
সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, জলবায়ু খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০০ বিলিয়ন ডলার, যা আবার বিতরণের জন্য পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের নিম্নগতি চলছে। প্রথমে যেখানে বছরে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হতো, তা এখন ১০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ফান্ডের টাকা অপচয় ও অব্যবস্থাপনার কারণে এটা হয়েছে। ফারমার্স ব্যাংকে (পদ্মা ব্যাংক) ফান্ডের কয়েকশ কোটি টাকা নিষেধ সত্ত্বেও রাখার পর তা লোপাট হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময়সভায় জলবায়ু ঋণ দায় সূচকের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তন্ময় সাহা।