ঢাকা | |

একে একে বেরিয়ে আসছে নাসিমের প্রতারণা

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন এক সময় শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এই পরিচয়ে সারা দেশে অপরাধের নেটওয়ার্ক গড়ে
  • আপলোড সময় : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ৫:১৫ সময়
  • আপডেট সময় : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, বিকাল ৫:১৫ সময়
একে একে বেরিয়ে আসছে নাসিমের প্রতারণা ছবি : সংগৃহীত

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন এক সময় শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এই পরিচয়ে সারা দেশে অপরাধের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন তিনি। এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়াননি এই নাসিম। 


স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত হাসিনা সরকা‌রের আম‌লে আঙ্গুল ফু‌লে কলা গাছ বনে যান নাসিম।


গড়ে তোলেন সম্প‌দের পাহাড়। ফেনীর পরশুরামে নিজ নামে গড়া আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের জায়গা দখল করে নিজের  অট্টালিকা গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান ও ফেনীর পরশুরামে ছিল নাসিমের আলিশান বাড়ি।


যে‌কোন উপা‌য়ে কখ‌নেও নি‌জের প‌রিচয়ে, কখ‌নও শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার ক‌রে নি‌জের উদ্দেশ্য হা‌সিল করতেন তিনি। প্রলোভন দে‌খি‌য়ে অনেক নারীকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতেন। এক নাসিমের লালসার শিকার শতাধিক নারী। তার খপ্পরে পড়ে অনেক নারী সর্বশান্ত হয়েছেন।

তার  প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছেন অনেক নারী। লোকলজ্জার ভয়ে সেসব নারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে পারেননি। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে নিজের যৌনস্বার্থ চরিতার্থ করেন নাসিম।

গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জিনাত রিজওয়ানা নামের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক নারী। তার দাবি, হবিগঞ্জের ৭৫০ শতাংশ জমি দখল করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তার ভাই জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ২০২২ সাল থেকে তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন।


জিনাত রিজওয়ানার অভিযোগ, ঢাকার উত্তরা এবং সিলেটে তার একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও সম্পদ রয়েছে। ঢাকার উত্তরা এলাকার তিনি একজন অন্যতম শীর্ষ করদাতা। যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও ব্যবসার কাজে তিনি নিয়মিত দেশে আসা-যাওয়া করেন। বিদেশে থাকায় একাধিক চক্র তাঁর ব্যবসা ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছে। না পেরে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।

 

এদিকে, ফেনী ১ আসনের পলাতক সাবেক সংসদ সদস্যের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান বাদী হয়ে ফেনীর বিশেষ জজ আদালতে নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। মামলায় নাসিমের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৭ টাকা ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজুর বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯ টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।


মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ১৯৮৬ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ২৩ বছর পর ২০০৯ সালে যুগ্ম সচিবের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। 


২০২৪ সালে ফেনী ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন নাসিম। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না। অথচ কানাডার নাগরিক হওয়ার পরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী ১ আসন থেকে অংশ নিয়ে এমপি হয়েছিলেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা মন্ত্রিত্ব লাভের সুযোগ নেই।


দুদক জানিয়েছে, তাদের অনুসন্ধান দল জানতে পেরেছে কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে নাসিমের। বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। কানাডায় বাড়ি, ব্যবসাসহ বিপুল সম্পদ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। চিঠিতে স্বামী-স্ত্রী দুজনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিয়ে তা দুদককে জানাতে বলা হয়েছে।


দুদকের নোয়াখালী অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‌সাবেক সংসদ সদস্য নাসিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। তার দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। সেজন্য তাদের চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি আমরা।


আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ফেনী ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ফেনীতে তার পরিচয় ছিল ‘নিজাম হাজারীর অভিভাবক’। ক্যাডার থেকে নিজাম হাজারীর গডফাদার হয়ে ওঠার পেছনে মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা নাসিম

  • বিষয়:

নিউজটি আপডেট করেছেন: নিউজ ডেস্ক।

বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কমেন্ট বক্স