বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বহুল প্রতীক্ষিত নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে। এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বর্তমান বেতনের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীকে আনন্দিত করেছে। তবে এই বেতন বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি খাতে কর্মরত কয়েক কোটি মানুষ উদ্বিগ্ন, কারণ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ফলে বাড়ি ভাড়া, শিক্ষা ব্যয়সহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাবে। রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া তথ্যে এসব উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এক দশক পর নতুন পে কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং এটি নবম পে স্কেলের সুপারিশ করবে। এই নতুন স্কেল সরকারি চাকরিজীবীদের সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি, বেতন কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। ২০১৫ সালের পর দ্বিতীয় বারের মতো এই কমিশন গঠন করা হয়েছে, এবং এর মাধ্যমে ১৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি ও গ্রেডভিত্তিক বৈষম্য কমানোর দাবি উঠেছে।
নতুন পে স্কেলে, প্রথম গ্রেডের বেতন ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা হতে পারে, আর ২০তম গ্রেডের সর্বনিম্ন বেতন হবে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। কমিশন বর্তমানে ২০টি গ্রেডের সংখ্যা কমানোর ব্যাপারে আলোচনা করছে, যাতে বেতন কাঠামো আরও সুবিন্যস্ত হয়।
অন্যদিকে, বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং জীবনযাত্রার খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে অনেক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭.৬৪ শতাংশ এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮.৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সরকারি বেতন বৃদ্ধি হলে, বাসাভাড়া ও অন্যান্য খরচের চাপ আরও বাড়বে, যা বেসরকারি খাতের কর্মীদের কাছে উদ্বেগজনক।
এদিকে, সরকারি বেতন কাঠামোর পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে দেশীয় অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে, তবে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৪.৯ শতাংশ হতে পারে। এর ফলে, দেশে দারিদ্র্য বাড়তে পারে এবং ৩০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, সরকারি পে স্কেল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আরও বিতর্কের জন্ম দিতে পারে, কারণ বেসরকারি খাতে কর্মরত মানুষের জন্য এটি নতুন চাপ সৃষ্টি করবে।